CNC মেশিনে
বিভিন্ন ধরনের অ্যাডিশনাল অ্যাক্সেসরিজ
বা ইকুইপমেন্টস ব্যাবহৃত হয়ে থাকে। এই অ্যাডিশনাল
অ্যাক্সেসরিজ বা ইকুইপমেন্টসগুলির মধ্যে কিছু কিছু প্রায় সব
ধরনের CNC
মেশিনেই দেখতে পাওয়া যায়। আবার এগুলির মধ্যে কয়েকটি CNC মেশিনে
প্রয়োজন অনুযায়ী থাকতেও পারে বা নাও থাকতে পারে। যেমন
টুল টারেট ইউনিট কেবলমাত্র CNC টার্নিং মেশিনেই থাকে, কিন্তু টুল ম্যাগাজিন ভার্টিক্যাল বা হরাইজন্টাল মেশিনিং
সেন্টারে দেখতে পাওয়া যায়। নিচে বিভিন্ন CNC মেশিনে বহুল
ব্যাবহৃত কিছু অ্যাডিশনাল অ্যাক্সেসরিজ
বা ইকুইপমেন্টস সম্মন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করা হল।
১। রোটারি
অ্যাক্সিস / টেবিল
CNC মেশিনে
রোটারি অ্যাক্সিস ব্যাবহার করা হয় ওয়ার্কপিসকে প্রয়োজন অনুযায়ী ঘুরিয়ে বিভিন্ন দিক
থেকে মেশিনিং অপারেশান করার জন্য, ফলে ওয়ার্কপিসের মেশিনিং অপারেশানে অনেক বেশী
ফ্লেক্সিবিলিটি পাওয়া যায়। সাধারনত CNC মেশিনে রোটারি
অ্যাক্সিসকে ‘B’ অ্যাক্সিস হিসাবে ধরা হয় এবং এই
রোটারি অ্যাক্সিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেশিনের সাথেই ‘ফোর্থ-অ্যাক্সিস’ হিসাবে কাজ
করে এবং এই রোটারি অ্যাক্সিসের মুভমেন্ট সাধারনত সম্পুর্ন ৩৬০ ডিগ্রি হয়। রোটারি
অ্যাক্সিস সাধারনত দুই ধরনের হয়, এগুলি হল কন্টিনিউয়াস রোটারি টেবিল এবং ইন্ডেক্স
টেবিল। কন্টিনিউয়াস রোটারি টেবিলের ক্ষেত্রে রোটারি অ্যাক্সিসকে এক
ডিগ্রীর থেকেও কম দূরত্ব পর্যন্ত মুভমেন্ট করানো সম্ভব, অর্থাৎ কন্টিনিউয়াস রোটারি
টেবিলের ক্ষেত্রে মুভমেন্ট এক ডিগ্রীর ভগ্নাংশ পরিমানে করা সম্ভব। কিন্তু
ইন্ডেক্স টেবিলের ক্ষেত্রে রোটারি অ্যাক্সিসকে ন্যুনতম এক ডিগ্রীর থেকে কম দূরত্ব
পর্যন্ত মুভমেন্ট করানো সম্ভব হয় না।
আবার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোটারি অ্যাক্সিস/টেবিল CNC মেশিনে একটি
আলাদা ইউনিট হিসাবেও সংযুক্ত করা হয়, সেক্ষেত্রে ওই ধরনের রোটারি টেবিলকে “টিল্টেড
রোটারি টেবিল” বলা হয়, এবং এই ধরনের রোটারি টেবিলের দুই
ধরনের রোটারি মুভমেন্ট পাওয়া যায়। এক দিকের
মুভমেন্টে টেবিলটি সম্পুর্ন ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে, কিন্তু অন্য দিকের মুভমেন্টে সম্পুর্ন
৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে না,
সেক্ষেত্রে সাধারনত এগুলি ১২০ থেকে ১৮০ ডিগ্রির মত মুভমেন্ট করে থাকে। এই ধরনের রোটারি টেবিলের রিজিডিটি (Rigidity) এবং মুভমেন্টের
ফ্লেক্সিবিলিটি তুলনামুলক অনেক কম, কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই ধরনের টিল্টেড
রোটারি টেবিলের ব্যাবহার সুবিধাজনক হয়। তাছাড়া টিল্টেড রোটারি টেবিল যেহেতু CNC মেশিনে
আলাদা একটি ইউনিট হিসাবে যুক্ত থাকে, তাই এক্ষেত্রে মেশিনের দাম ফিক্সড রোটারি
অ্যাক্সিসের তুলনায় অনেক কম হয় এবং প্রয়োজন না থাকলে এগুলিকে
মেশিনের বাইরে রেখেও মেশিনকে চালানো যেতে পারে। পরবর্তিতে একটি টিল্টেড রোটারি টেবিলের ছবি
দেওয়া হল।

২। অটোমেটিক
টুল চেঞ্জার ইউনিট
অটোমেটিক
টুল চেঞ্জার বা ATC হল CNC মেশিনের
একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ATC টুল ম্যাগাজিন থেকে টুলকে নিয়ে
এসে মেশিনের স্পীন্ডলে রাখে এবং সাথে সাথে মেশিনের স্পীন্ডলে অবস্থিত টুলকেও
ম্যাগাজিনে রেখে দেয়। সাধারনত CNC মেশিনে
এই কাজটি সম্পন্ন হতে তিন থেকে সাত সেকেন্ড সময় লাগে। ম্যাগাজিনের গঠনের উপর নির্ভর করে ATC প্রধানত
দুই ধরনের হয়, এগুলি হল ড্রাম টাইপ এবং চেইন টাইপ ম্যাগাজিন।
যে সমস্ত মেশিনের টুল সংখ্যা ৩০এর থেকে কম থাকে, সাধারনত সেখানে ড্রাম টাইপ ম্যাগাজিন এবং যে সমস্ত মেশিনের
টুল সংখ্যা ৩০এর থেকে বেশী থাকে, সেখানে চেইন
টাইপ ম্যাগাজিন ব্যাবহার করা হয়। সাধারনত ম্যগাজিন থেকে টুল খোঁজার স্পীড চেইন টাইপ ATCর তুলনায়
ড্রাম টাইপ ATC তে অনেক কম হয়। যদিও টুল চেঞ্জিং টাইম নির্ভর করে
থাকে ATC আর্মের গঠনের উপর। CNC মেশিনে টুল ম্যাগাজিনকে চালানোর জন্য কখনো সার্ভো মোটর বা কখনো ইন্ডাকশান মোটর ব্যাবহার করা হয়। নিচে একটি চেইন টাইপ অটোমেটিক টুল চেঞ্জার বা ATCর ছবি দেওয়া হল।

অটোমেটিক টুল চেঞ্জার ইউনিট কিভাবে
কাজ করে?
অটোমেটিক টুল চেঞ্জের জন্য প্রথমেই CNC মেশিনের
অ্যাক্সিসগুলিকে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে হবে যে জায়গাটিকে মেশিনের
“টুল চেঞ্জ পজিশান” ("tool change position") বলা হয় এবং এর সাথেই মেশিনের স্পীন্ডলকেও একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে থেমে
থাকতে হবে, যে অবস্থানটিকে স্পীন্ডলের “কী-লক” (key-lock) অবস্থান বলা হয়। এবার CNC কন্ট্রোলার থেকে ATC ইউনিট টুল চেঞ্জ কমান্ড পাওয়ার
পর ATC ম্যাগাজিন ঘুরে ঘুরে নির্দিষ্ট টুলকে চেঞ্জিং পজিশানে নিয়ে আসে। এবং তারপর সমস্ত কন্ডিশান যদি ঠিক থাকে তবে ATC আর্ম
ম্যাগাজিনের ঐ টুলকে এবং স্পীন্ডলে যদি কোন টুল থেকে থাকে তবে সেটিকেও একসাথে ধরে
বা গ্রীপ করে। টুলকে সঠিকভাবে ধরার বা গ্রীপ করার জন্য ATC আর্মের দুই দিকে দুটি স্পেশাল টাইপের গ্রীপার লাগানো থাকে, যেগুলি সাধারনত
স্প্রীং টেনশনে কাজ করে। এরপর ATC আর্মটি
একসাথে দুটি টুলকেই ম্যাগাজিন এবং স্পীন্ডল থেকে টেনে বাইরে বের করে আনে এবং এরপর
পুরো ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে সেই টুলদুটিকে একসাথে তাদের নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন
করে মেশিনের ম্যাগাজিনে এবং স্পীন্ডলের মধ্যে বসিয়ে দেয়। এভাবে একসাথে দুটি টুলই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে থাকে।
টুল ম্যাগাজিনে
অবস্থিত টুলের নাম্বার ম্যাগাজিনের
পকেটের নাম্বারের সাথেই CNC কন্ট্রোলার “টুল ম্যাগাজিন ডাটাতে” লিখে
রাখে। অটোমেটিক টুল চেঞ্জের পর CNC
কন্ট্রোলারও মেমোরিতে অবস্থিত টুল ম্যাগাজিন ডাটাকে প্রয়োজন অনুযায়ী আপডেট করে নেয়। এই ধরনের ATC কে র্যান্ডম
টুল চেঞ্জ ব্যাবস্থা বলা হয়, এবং এক্ষেত্রে টুল ম্যাগাজিনে টুলের জন্য কোন
নির্দিষ্ট পকেট থাকে না, কিন্তু কিছূ CNC মেশিনের ক্ষেত্রে আবার নির্দিষ্ট টুলের জন্য নির্দিষ্ট পকেট থাকে,
সেক্ষেত্রে টুল চেঞ্জিং টাইম তুলনামুলক বেশী হয়।
৩। টুল টারেট
পুর্বে উল্লিখিত অটোমেটিক টুল চেঞ্জার ইউনিট ছাড়াও কিছু CNC মেশিনে টুল ম্যাগাজিন হিসাবে টুল টারেট ব্যাবহার করা হয়। টুল টারেট হল CNC মেশিনের সবচেয়ে সরল টুল চেঞ্জিং সিস্টেম যেটা কিনা প্রধানত CNC টার্নিং সেন্টারেই ব্যাবহার করা হয়।
টুল টারেটে সাধারনত আট থেকে বারোটি
টুল একসাথে থাকতে পারে। টুল টারেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এখানে কোনো অটোমেটিক টুল
চেঞ্জার থাকে না, ফলে টারেট সিস্টেমে টুল চেঞ্জিং সময়ও খুবই কম হয়। CNC কন্ট্রোলার থেকে টুল চেঞ্জ কমান্ড পাওয়ার পর সম্পুর্ন টারেট
ইউনিটটি প্রথমেই নিজের অবস্থান থেকে একটু বাইরের দিকে বেরিয়ে আনক্ল্যাম্প হয়। এরপর ঐ আনক্ল্যাম্প অবস্থানেই টারেটটি ইন্ডাকশান মোটর বা
হাইড্রোলিক মোটরের সাহায্যে ঘুরে ইনডেক্সিং (indexing) হয়, অর্থাৎ প্রয়োজনীয় টুলটিকে স্পীন্ডলের ওয়ার্কপিসের
কাটিং লাইনে আনা হয়। সঠিক টুলটি জবের কাটিং লাইনে এলো কিনা সেটা জানার জন্য এবং
টুল কাউন্টিং এর জন্য ফিডব্যাক হিসাবে কখনও প্রক্সিমিটি সুইচ বা কখনও অ্যাবসোলিউট
এনকোডার ব্যাবহার করা হয়। টারেটটি
নির্দিষ্ট আবস্থানে আসার পর পুনরায় টারেটটি আবার একটু পিছিয়ে এসে ক্ল্যাম্প হয়ে
যায়। টুল টারেটের আট বা বারোটি টুলের
মধ্যে কেবলমাত্র একটিমাত্র টুলই মেশিনের স্পীন্ডলের সাথে কাটিং লাইনে থাকে, এবং
কেবলমাত্র ওই টুলটিই কাটিং অপারেশান করে থাকে। নিচে CNC টার্নিং সেন্টারে ব্যাবহৃত একটি টুল টারেটের ছবি দেওয়া হল।

CNC টার্নিং
সেন্টারে স্পীন্ডলের চাকের মধ্যে ধরা ওয়ার্কপিস ঘুরন্ত অবস্থায় থাকে এবং টুল
টারেটের মধ্যে অবস্থিত সবরকম কাটিং টুলই ফিক্সড অবস্থায় থাকে। এবার ওই ফিক্সড টুলকে উপর নিচে করে ঘুরন্ত ওয়ার্কপিস
থেকে মেটেরিয়াল রিমুভ করা হয়। কিন্তু CNC টার্নমিল মেশিনে টুল টারেটের মধ্যেই কখনো একটি বা দুটি
টুল লাইভ টুল (Live Tool) হিসাবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ
সেক্ষেত্রে ঐ টুল দুটি টারেটের মধ্যেই একটি বিশেষ ব্যাবস্থায় আলাদা ছোট সার্ভো
মোটরের সাহায্যে টারেটের মধ্যে ফিক্সড থাকা অবস্থায় ঘুরতে সক্ষম। তাই CNC টার্নমিল মেশিনে স্পীন্ডলের মধ্যে ধরা জবও যেমন ঘুরতে পারে
সেরকম টারেটের মধ্যে রাখা লাইভ টুলও ঘুরতে সক্ষম।
৪। পাওয়ার চাক
পাওয়ার চাক সাধারনত CNC টার্নিং মেশিনের স্পিন্ডলের সাথে ব্যাবহার করা হয় এবং এর
সাহায্যে মেশিনিং এর জন্য কোন সিলিন্ড্রিক্যাল ওয়ার্কপিসকে হোল্ড করা হয়। পাওয়ার চাককে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাইড্রোলিক
প্রেসারের সাহায্যে অপারেট করা হয়। পাওয়ার চাকে সাধারনত তিনটি অ্যাডজাস্টেবল জ্য (Adjustable Jaws) থাকে এবং এগুলিকে হাইড্রোলিক
প্রেশারের সাহায্যে একসাথে স্পিন্ডলের সেন্টারের দিকে বা বাইরের দিকে খুব সামান্য
পরিমানে মুভমেন্ট করানো যায়। যেহেতু পাওয়ার চাকের জ্য-গুলিকে খুব
সামান্য পরিমানে মুভমেন্ট করা যায়, তাই বিভিন্ন ডায়ামিটারের ওয়ার্কপিসের ক্ষেত্রে
জ্য-গুলিকে ওয়ার্কপিসের ডায়ামিটার অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করার প্রয়োজন হয়। ওয়ার্কপিসকে হোল্ড করার জন্য যখন
হাইড্রোলিক প্রেশার দেওয়া হয়, তখন পাওয়ার চাকের মধ্যে একটি হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের
মুভমেন্টের ফলে সিলিন্ডারের সাথে বিশেষভাবে সংযুক্ত জ্য-গুলির স্পিন্ডলের
সেন্টারের দিকে একসাথে মুভমেন্ট হয়, ফলে ওয়ার্কপিসকে দৃড়ভাবে চেপে ধরে বা
ক্ল্যাম্প করে। ওয়ার্কপিসকে আনক্ল্যাম্প করার
জন্য হাইড্রোলিক সিলিন্ডারকে বিপরিত দিকে মুভমেন্ট করার প্রয়োজন হয়। নিচে CNC টার্নিং মেশিনে ব্যাবহৃত একটি পাওয়ার
চাকের ছবি দেওয়া হল।

৫। অটোমেটিক প্যালেট চেঞ্জার ইউনিট
মূলত CNC মেশিনের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্যই মেশিনে অটোমেটিক প্যালেট চেঞ্জার
ইউনিট ব্যাবহার করা হয়। প্যালেট বলতে বোঝায় এমন একটি
ডিভাইস যার ওপর মেশিনিং এর জন্য ওয়ার্কপিসকে বেঁধে বা হোল্ড করে রাখা হয়। এই ব্যাবস্থায় মেশিনে সাধারনত দুটি প্যালেট থাকে এবং যখন একটি প্যালেট
মেশিনিং অপারেশানে যুক্ত থাকে অর্থাৎ মেশিনের ভিতরে থাকে, তখন অপর প্যালেটটি
মেশিনিং অপারেশান জোনের বাইরে থাকে। এবং যতক্ষণ মেশিনের ভিতরের
প্যালেটটিতে মেশিনিং অপারেশান সম্পন্ন হতে থাকে, সেই সময়ে মেশিনের অপারেটার বাইরের
প্যালেটটিতে সহজেই ওয়ার্কপিস লোড করতে পারে এবং মেশিনের ভিতরের প্যালেটটির কাজ
সম্পন্ন হয়ে গেলে বাইরের প্যালেটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেশিনের ভিতরে চলে যায় এবং
ভিতরের প্যালেটটি মেশিনিং অপারেশান জোনের বাইরে বেরিয়ে আসে ও মেশিনের অপারেটার
ফিনিশ ওয়ার্কপিসগুলিকে ঐ প্যালেট থেকে আনলোড করে নতুন ওয়ার্কপিস লোড করে থাকে। তাই মূলত সময়ের সাশ্রয়ের জন্যই CNC মেশিনে এই ধরনের ব্যাবস্থা করা
হয়। নিচে CNC মেশিনে ব্যাবহৃত একটি অটোমেটিক
প্যালেট চেঞ্জিং ব্যাবস্থার ছবি দেওয়া হল।অটোমেটিক প্যালেট চেঞ্জার
ইউনিট প্রধানত দুটি অংশ দিয়ে তৈরি হয়। একটি ক্ল্যাম্প /
আনক্ল্যাম্প মেকানিজম (clamp/unclamp mechanism ) ও
অপরটি অটোমেটিক প্যালেট চেঞ্জার (automatic pallet changer) মেকানিজম। ক্ল্যাম্প মেকানিজম প্যালেটকে মেশিনের টেবিলের সাথে
দৃড়ভাবে আটকে থাকতে সাহায্য করে এবং আনক্ল্যাম্প মেকানিজম প্যালেটকে মেশিনের টেবিল
থেকে সহজেই রিলিজ করতে সাহায্য করে। CNC মেশিনে প্যালেট ক্ল্যাম্প /
আনক্ল্যাম্প সাধারনত হাইড্রোলিক প্রেসারের সাহায্যে করা হয়। প্যালেট চেঞ্জিং মেকানিজম প্যালেটকে মেশিনের লোডিং স্টেশান থেকে মেশিনের
ভিতরের টেবিলে বা ওয়ার্কস্টেশনে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। CNC মেশিনে এই ব্যাবস্থা কখনো লিনিয়ার হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের সাহায্যে, কখনো
নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের সাহায্যে বা কখনো ইলেকট্রিক মোটর এবং চেন ও বলস্ক্রর
সাহায্যে করা হয়ে থাকে।
৬। অটোমেটিক
বার ফিডার ইউনিট
এই ডিভাইসটি সাধারনত CNC টার্নিং
মেশিনের সাথে আলাদা একটি ইউনিট হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। অটোমেটিক
বার ফিডারের সাহায্যে CNC টার্নিং
মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে ওয়ার্কপিস ব্ল্যাঙ্কের যোগান দেওয়া হয়। এখানে
ওয়ার্কপিসের ব্ল্যাঙ্ক হিসাবে বড় বড় বার মেশিনের স্পীন্ডলের কাটিং ফেসের ঠিক
বিপরিত দিক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেশিনে পাঠানো হয় ও ওয়ার্কপিসের মাপ অনুযায়ী ওই
ব্ল্যাঙ্ক থেকে কেটে ওয়ার্কপিস তৈরি করা হয় এবং একটি বার শেষ হয়ে যাওয়ার পর
স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপর একটি বার স্পীন্ডলের ভিতর দিয়ে মেশিনের কাটিং লাইনে চলে আসে। ফলে
এক্ষেত্রে মেশিন অপারেটারের বারংবার মেশিনে ওয়ার্কপিসের ব্ল্যাঙ্ক লোড করতে হয় না,
ফলে মেশিনের এফিসিয়েন্সিও এক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়। বার
ফিডার মেশিনের প্রয়োজন অনুযায়ী সাধারনত হাইড্রোলিক এবং নিউম্যাটিক কন্ট্রোলড এই
দুই ধরনেরই হতে পারে। নিচে CNC টার্নিং
মেশিনে ব্যাবহৃত একটি অটোমেটিক বার ফিডারের
ছবি দেওয়া হল।
৭।
লুব্রিকেশন সিস্টেম
CNC মেশিনের লুব্রিকেশন সিস্টেম হল মেশিনের
একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যে কোন CNC মেশিনের লিনিয়ার গাইডওয়েজ, বল-স্ক্র ইত্যাদির কন্টাক্ট পয়েন্টসের মধ্যেকার
ফ্রিকশান মেশিনের মধ্যে সবথেকে সমস্যাজনক অংশ। এবং এর উপরেই যে কোন মেশিনের মেশিনিং অপারেশানের প্রেসিশান এবং অ্যাকুইরেসি
(presision and acuuracy) নির্ভর করে থাকে। গাইডওয়েজের মধ্যেকার অতিরিক্ত
ফ্রিকশানের ফলে CNC মেশিনের অ্যাক্সিসের মুভমেন্টও ইর্যাটিক ও জার্কি
(erratic and jurkey) হয়ে থাকে, এবং এর ফলে মেশিনের কাটিং এর সময় ওয়ার্কপিসের উপরও
চ্যাটারিং মার্ক (chattering mark) তৈরি হয়। CNC মেশিনে মূলত এই সমস্যাকে দূর
করার জন্যই লুব্রিকেশন সিস্টেম
ব্যাবহার করা হয়। CNC মেশিনে লুব্রিকেশন সিস্টেমের
সাহায্যে একটি পুর্বনির্ধারিত সময় অন্তর লিনিয়ার গাইডওয়েজ, বল-স্ক্র ইত্যাদির
কন্টাক্ট পয়েন্টসের মধ্যে খুব সামান্য পরিমান লুব্রিকেটিং অয়েল দেওয়ার ব্যাবস্থা
করা হয়। এবং মেশিন যতক্ষণ চালু থাকে ততক্ষণই কিছু সময় অন্তর এই
লুব্রিকেটিং অয়েল দেওয়ার ব্যাবস্থা চালু থাকে। এবং এর ফলে মেশিনের ফ্রিকশানও কম হয় এবং মেশিনকে রাস্টিং বা করোশান হওয়া
থেকেও রক্ষা করে। নিচে CNC মেশিনে ব্যাবহৃত লুব্রিকেশন
সিস্টেমের একটি ছবি দেওয়া হল।

পূর্বের ছবি থেকে বোঝা যায় একটি লুব্রিকেশন সিস্টেম কতগুলি আলাদা ইউনিট নিয়ে তৈরি হয়। এগুলি হল পাম্প, মোটর, লুব্রিকেশন প্রেসার
এবং লেভেল সেন্সরস, অয়েল ট্যাঙ্ক ইত্যাদি। লুব্রিকেশন সিস্টেমে সাধারনত ছোট ইন্ডাকশান মোটরের সাহায্যে একটি ছোট পাম্পকে কিছু সময় অন্তর
চালানো হয় এবং পাম্পের অয়েল প্রেশার আউটলেট থেকে সরু কপার টিউবের সাহায্যে মেশিনের
বিভিন্ন যন্ত্রাংশে যেমন গাইডওয়েজ, বল-স্ক্রু ইত্যাদিতে লুব্রিকেটিং অয়েল পাঠানো
হয়। এই লুব্রিকেশন পাম্প
কতক্ষণ চলবে বা কতক্ষণ বন্ধ থাকবে সেটা নির্ভর করে মেশিন বিল্ডার্সের লেখা মেশিনের
PLC র উপর। লুব্রিকেশন লাইনের
একদম প্রান্তে ডোজার লাগানো থাকে, যা কিনা ঠিক করে কি পরিমান লুব্রিকেটিং অয়েল
গাইডওয়েজ বা বল-স্ক্রুতে পাঠানো হবে। লুব্রিকেশন
সিস্টেমে দুটি আলাদা সেন্সর লাগানো থাকে, একটি হল ফ্লোট সুইচ যা কিনা অয়েল
ট্যাঙ্কের মধ্যে লুব্রিকেটিং অয়েলের লেভেল সেন্স করে এবং অপরটি হল প্রেসার সুইচ যা
লুব্রিকেটিং অয়েল প্রেসার পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা তা CNC কন্ট্রোলারে ফিডব্যাক পাঠিয়ে
থাকে। এছাড়াও লুব্রিকেশন সিস্টেমে একটি প্রেসার গেজও লাগানো থাকে, লুব্রিকেটিং অয়েল পাম্পের প্রেসার দেখার
জন্য। সাধারনত CNC মেশিনে লুব্রিকেটিং অয়েল হিসাবে SERVO-68 অয়েল
ব্যাবহার করা হয় এবং এই অয়েলটি মেশিনে ব্যাবহৃত অন্যান্য অয়েলের তুলনায় অনেক গাঢ়
(thik) হয়।
৮।
কুল্যান্ট সিস্টেম
CNC মেশিনের কুল্যান্ট
সিস্টেমও আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্ট। মেশিনের কুল্যান্ট সিস্টেম সাধারনত কয়েকটি আলাদা ডিভাইস
এবং মেটেরিয়ালের সমন্বয়ে তৈরি হয়, এগুলি হল যথাক্রমে কুল্যান্ট, কুল্যান্ট পাম্প
অ্যান্ড ট্যাঙ্ক এবং কুল্যান্ট ডেলিভারি সিস্টেম।
কুল্যান্ট
যে কোন মেশিনে প্রধানত
ওয়ার্কপিস এবং কাজের প্রকারভেদে অর্থাৎ মেটাল ওয়ার্কিং প্রসেসের উপর নির্ভর করেই
বিভিন্ন রকমের কাটিং ফ্লুইড যেমন অয়েল, অয়েল-ওয়াটার ইমালশান, অ্যারোসোল ইত্যাদি
কুল্যান্ট হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। বেশিরভাগ CNC
মেশিনেই কুল্যান্ট হিসাবে সেমি সিন্থেটিক কুল্যান্ট বা সলিউবল অয়েল এবং জল দিয়ে তৈরি ইমালসিফায়েড
কুল্যান্টই ব্যাবহার করা হয়। CNC মেশিনে
বহুল ব্যাবহৃত কুল্যান্টগুলির মধ্যে একটি হল “SERVOCUT”, যা কিনা জল দিয়ে তৈরি ইমালসিফায়েড কুল্যান্ট। CNC
মেটাল কাটিং মেশিনে যে কুল্যান্ট ব্যাবহার করা হয় তার pH ভ্যালু সাধারনত ৮
থেকে ৯.৫ এর মধ্যে রাখা হয়, এবং কুল্যান্টের কনসেন্ট্রেশন (Concentration) ঠিক আছে কিনা
সেটা রিফ্র্যাক্টোমিটার (Refractometer) নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়। CNC মেশিনে ব্যাবহৃত কুল্যান্টের প্রধানত তিনটি
বিশেষত্ব থেকে থাকে, এগুলি হল কুলিং, লুব্রিকেশন এবং চিপস ক্লিনিং।

কুলিং - যে কোন মেটাল
কাটিং মেশিনে কাটিং এর সময় উৎপন্ন হিট কাটিং টুলের লাইফের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। মেটাল কাটিং এর সময় খুব সামান্য পরিমান হিট যদিও ভালো
কারন এটি ওয়ার্ক মেটেরিয়ালকে নরম করে দেয়, ফলে মেটেরিয়াল কাটতে সুবিধা হয়। কিন্ত খুব বেশী পরিমান হিট কাটিং টুলের পক্ষে খুবই
খারাপ কারন এই হিট টুলের কাটিং টিপকেও নরম করে দেয়, ফলে টুল খুব তাড়াতাড়ি খারাপ
(blunt) হয়ে যায়। তাই CNC মেটাল কাটিং মেশিনের এই
অসুবিধা দূর করার জন্যই প্রধানত কুল্যান্ট ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
লুব্রিকেশন - কুল্যান্টের
লুব্রিকেশন প্রপার্টি কাটিং টুলের ওয়ার্কপিসের মেটেরিয়ালকে সহজে কাটতে সাহায্য করে। যখন কাটিং টুলের টিপস ওয়ার্কপিস মেটেরিয়ালের উপর দিয়ে
চলতে থাকে তখন কাটিং এর ফলে যে মেটাল চিপস উৎপন্ন হয় সেটা কাটিং টুলের সাথে
ঘর্ষনের ফলেও প্রচুর হিট তৈরি হয়। CNC মেশিনে
ব্যাবহৃত কুল্যান্টের লুব্রিকেশন প্রপার্টির জন্য এই হিট অনেকটাই কম হয়ে যায়।
চিপস ক্লিনিং - CNC মেশিনে চিপস ক্লিনিংও
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। মেটেরিয়াল কাটিং এর সময় যদি কাটিং টুলের প্রান্তে
প্রচুর পরিমানে কুল্যান্ট স্প্রে করা যায়, তাহলে কাটিং এর ফলে উৎপন্ন মেটাল চিপস
সহজেই কাটিং টুলের প্রান্ত থেকে দূরে সরে যায়। নতুবা কাটিং এর ফলে উৎপন্ন ঐ মেটাল চিপসকে পুনরায় কাটার
সম্ভাবনা থেকে যায় এবং এর ফলে মেটেরিয়ালের কাটিং সারফেসের ফিনিশও ভালো হয় না ও কাটিং টুলটিও
খুব তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যায়।
কুল্যান্ট পাম্প অ্যান্ড ট্যাঙ্ক
CNC মেশিনে কখনো একটি, দুটি বা তার বেশী কুল্যান্ট পাম্প ব্যাবহার
করা হয়ে থাকে। যদিও প্রতিটি কুল্যান্ট পাম্পই
মেশিনে আলাদা আলাদা উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করা হয় এবং এদের প্রেশার ও কুল্যান্ট
ডেলিভারির পরিমানও আলাদা হয়। কুল্যান্ট
পাম্পগুলি সাধারনত একটিই মাত্র কুল্যান্ট ট্যাঙ্কের উপর বসানো থাকে। CNC মেশিনে কম
কুল্যান্ট প্রেসারের জন্য সাধারনত সেন্ট্রিফিউগাল বা গীয়ার পাম্প ব্যাবহার করা হয়
এবং খুব বেশী কুল্যান্ট প্রেসারের প্রয়োজন হলে স্ক্রু পাম্প ব্যাবহার করা হয়। কুল্যান্ট পাম্পগুলি কুল্যান্ট ট্যাঙ্ক থেকে প্রয়োজন
অনুযায়ী কুল্যান্টকে মেশিনের বিভিন্ন অংশে ফ্লেক্সিবল হোস বা স্টীল পাইপের মধ্য
দিয়ে পাঠিয়ে থাকে। আবার কুল্যান্টকে মেশিনের মধ্যে থাকে
পুনরায় কুল্যান্ট ট্যাঙ্কে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য একটি কুল্যান্ট রিটার্ন পাম্প
ব্যাবহার করা হয়। নিচে একটি CNC মেশিনের
কুল্যান্ট পাম্প, ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য যন্ত্রাংশের ছবি দেওয়া হল।

কুল্যান্ট ডেলিভারি সিস্টেম
CNC মেশিনে প্রধানত তিন রকমের কুল্যান্ট ডেলিভারি সিস্টেম
থাকে, এগুলি হল স্প্রে কুল্যান্ট ডেলিভারি, থ্রু টুল কুল্যান্ট ডেলিভারি এবং
ফ্ল্যাশ কুল্যান্ট ডেলিভারি সিস্টেম।
স্প্রে কুল্যান্ট ডেলিভারি - প্রায় সব ধরনের CNC মেশিনেই এই
কুল্যান্ট ডেলিভারি সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়। এই ধরনের কুল্যান্ট ডেলিভারি সিস্টেমে লো প্রেসার
পাম্পের ডেলিভারি লাইন থেকে ফ্লেক্সিবল এবং অ্যাডজাস্টেবল নজেলের সাহায্যে মেশিনের
স্পীন্ডলে অবস্থিত কাটিং টুলের ঠিক কাটিং এজের উপর বাইরে থেকে আলাদাভাবে কুল্যান্ট
স্প্রে করা হয় যাতে কাটিং এর সময় কাটিং এজে উৎপন্ন হিট কম হয় এবং মেটাল চিপসও দূরে
সরে যায়।

থ্রু টুল কুল্যান্ট
ডেলিভারি - কোন মেটাল কাটিং মেশিনে যদি কখনো ডিপ
হোল ড্রীল (deep hole drill) বা ওয়ার্কপিসের ভিতরের প্রান্তে কোন কাটিং করার
প্রয়োজন হয়, তবে সেক্ষেত্রে কাটিং টুলের উপর বাইরে থাকে দেওয়া স্প্রে
কুল্যান্ট যথেষ্ট হয় না কারন এটি টুলের কাটিং এজের প্রান্ত পর্যন্ত পৌছাতেই পারে
না। ফলে সেক্ষেত্রে কাটিং টুল প্রচন্ড
হিট উৎপন্ন করে এবং সহজেই কাটিং টুলটি নষ্ট হয়ে যায়। CNC মেশিনে এই
অসুবিধা দূর করার জন্য আলাদাভাবে থ্রু টুল কুল্যান্ট ডেলিভারি সিস্টেম ব্যাবহার
করা হয়। এই ব্যাবস্থায় কুল্যান্টকে কাটিং
টুলের ঠিক পেছন দিয়ে পাঠিয়ে টুলের কাটিং এজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। এই ব্যাবস্থায় কুল্যান্ট
পাম্পের ডেলিভারি লাইন থেকে কুল্যান্ট সরাসরি পাইপ লাইনের সাহায্যে মেশিনের
স্পীন্ডলের পিছনে লাগানো একটি “রোটারী ইউনিয়নের” মধ্যে পাঠানো
হয়। এরপর ঐ রোটারী ইউনিয়ন থেকে
স্পীন্ডলের মধ্যে অবস্থিত একটি “ড্র টিউবের” সাহায্যে কুল্যান্টকে কাটিং টুলের পিছনে থাকা পুল
স্টাডের মধ্যে দিয়ে একটি বিশেষ ব্যাবস্থায় কাটিং টুলের কাটিং এজ পর্যন্ত পাঠানো হয়। তাই থ্রু টুল কুল্যান্ট ব্যাবস্থার জন্য কাটিং টুলের
হোল্ডারের গঠনও সাধারন টুল হোল্ডারের থেকে আলাদা হয়। CNC মেশিনে থ্রু
টুল কুল্যান্টের জন্য সাধারনত হাই প্রেসার কুল্যান্ট পাম্পই ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

ফ্ল্যাশ কুল্যান্ট
ডেলিভারি - ফ্ল্যাশ কুল্যান্ট বা ফ্লাড
কুল্যান্ট CNC মেশিনে মূলত চিপসকে পরিস্কার করার জন্যই ব্যাবহার করা হয়। মেশিনিং অপারেশনের সময় উৎপন্ন মেটাল চিপস মেশিনের ভিতরে
চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে এবং ক্রমে এই মেটাল চিপস মেশিনের চারিদিকেও জমে যায়। ফ্ল্যাশ কুল্যান্ট ফ্লো এর সাহায্যে এই সমস্ত চিপসকেই
চিপ কনভেয়ারের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ফেলা হয় এবং এরপর কনভেয়ার সমস্ত চিপসকে সেখান থেকে
মেশিনের বাইরের আলাদা একটি বিনে নিয়ে গিয়ে জমা করে।
৯। চিপ কনভেয়ার সিস্টেম
চিপ কনভেয়ার সিস্টেম CNC মেশিনে ব্যাবহার করা হয় মেশিনের কাটিং এর ফলে উৎপন্ন
মেটাল চিপসকে একটি নির্দিষ্ট বিন বা পাত্রে নিয়ে ফেলার জন্য।
চিপ কনভেয়ার সিস্টেমে সাধারনত বিভিন্ন রকমের ওভারলোড
ডিটেকশান ডিভাইস (overload detection devices) লাগানো থাকে যাতে কিনা
চিপ বহন করার সময় কনভেয়ারটি জ্যামিং এর ফলে ড্যামেজ না হয়। CNC মেশিন যেহেতু সর্বদা চালু থাকে তাই চিপ কনভেয়ারে সাধারনত হেভি ডিউটি
এবং হাই এফিসিয়েন্সির মোটর ব্যাবহার করা হয়। এছাড়াও কনভেয়ারের বেল্ট, চেইন
এবং গাইডও এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে কিনা কনভেয়ারটি সর্বদা লোড নিয়ে চলতে পারে। CNC মেশিনে একটি চিপ কনভেয়ার ব্যাবহারে সাধারনত নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি
পাওয়া যায়।
·
কোন বাধা ছাড়া সহজেই মেশিন থেকে
চিপ বের করা যায়
·
গরম চিপস মেশিনে জমে হিট বিল্ড-আপ
করতে পারে না।
·
চিপস এবং কুল্যান্ট সহজেই আলাদা
হয়ে যায়
CNC মেশিনে সাধারনত তিন ধরনের চিপ কনভেয়ার সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়। এগুলি হল হিঞ্জ বেল্ট (hinge belt) টাইপ, স্ক্র্যাপার (scraper)
টাইপ এবং ম্যাগনেটিক (magnetic) টাইপ। নিচে এদের সম্মন্ধে আলাদাভাবে আলোচনা করা হল।
হিঞ্জ বেল্ট চিপ কনভেয়ার -
CNC মেশিনে সবচেয়ে বেশি এই ধরনের চিপ কনভেয়ারই ব্যাবহার
করা হয়। এটি ভারী এবং শক্ত চিপস সহজেই বয়ে নিয়ে যেতে পারে। এখানে মেশিন থেকে কাটিং এর ফলে যে চিপসগুলি উৎপন্ন হয়, তা সরাসরি এই
কনভেয়ারের বেল্টের উপর পড়ে এবং তারপর সেগুলি মেশিনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। নিচে
একটি হিঞ্জ বেল্ট টাইপ চিপ কনভেয়ারের ছবি দেওয়া হল।

স্ক্র্যাপার টাইপ কনভেয়ার - স্ক্র্যাপার টাইপ চিপ
কনভেয়ার CNC মেশিনে সাধারনত ব্যাবহার করা হয় যেখানে আয়রন, ব্রাস, ব্রোঞ্জ ইত্যাদি মেশিনিং এর ফলে ছোটো
ছোটো চিপস তৈরি হয়। এখানেও চিপস সরাসরি কনভেয়ারের উপর
পড়ে এবং স্ক্র্যাপারের সাহায্যে সেগুলিকে টেনে কনভেয়ারের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া
হয় এবং অবশেষে চিপস বিনে ফেলা হয়। নিচে একটি
স্ক্র্যাপার টাইপ চিপ কনভেয়ারের ছবি দেওয়া হল।

ম্যাগনেটিক টাইপ চিপ কনভেয়ার - ম্যাগনেটিক
টাইপ চিপ কনভেয়ার সাধারনত সেই সব CNC মেশিনেই ব্যাবহার করা হয় যেখানে ফেরাস
মেটেরিয়াল কাটা হয় এবং তার ফলে ছোটো ছোটো চিপস তৈরি হয়। এই কনভেয়ারে মেশিনের চিপস একটি স্টেইনলেস স্টীল সারফেসের উপর সরাসরি পড়ে
এবং চিপসগুলি খুব শক্তিশালী ম্যাগনেটের সাহায্যে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, যা কিনা ঐ
স্টেইনলেস স্টীল সারফেসের নিচেই ঘুরতে থাকে। এরপর চিপসগুলিকে কনভেয়ারের
প্রান্তে চিপস বিনের উপর ডিসচার্জ করা হয়। নিচে একটি
ম্যাগনেটিক টাইপ চিপ কনভেয়ারের ছবি দেওয়া হল।

১০। কুল্যান্ট ফিল্টারেশান ইউনিট
CNC মেশিনে মেশিনিং প্রসেসের সময় যে চিপস উৎপন্ন হয়, তা
সাধারনত চিপ কনভেয়ারের সাহায্যে মেশিনের বাইরে পাঠানো হয়। কিন্ত খুব সূক্ষ্ম চিপস কনভেয়ারের সাহায্যে মেশিনের বাইরে যেতে পারে না,
সেগুলি কাটিং কুল্যান্টের সাথে সহজেই মিশে থাকে এবং ওই কুল্যান্ট পুনঃ ব্যাবহার
করার ফলে খুব তাড়াতাড়ি কুল্যান্টের প্রপার্টি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই অসুবিধা দূর করার জন্য CNC মেশিনের সাথেই আলাদাভাবে কুল্যান্ট
ফিল্টারেশান ইউনিট ব্যাবহার করা হয়। এই ইউনিটে সাধারনত একটি
আলাদা পাম্প থাকে, যা কিনা মেশিনের কুল্যান্ট ট্যাঙ্ক থেকে কন্টামিনেটেড (Contaminated) কুল্যান্টকে পাম্প করে নিয়ে এসে একটি
ফিল্টারের ওপর ফেলে, এবং ফ্রেশ কুল্যান্টকে ফিল্টারের নিচে একটি আলাদা ট্যাঙ্কে
জমা করে এবং তারপর ওই ট্যাঙ্ক থেকে আলাদা একটি পাম্পের সাহায্যে পুনরায় মেশিনের
কুল্যান্ট ট্যাঙ্কে ফ্রেশ কুল্যান্টকে পাঠানো হয়। এই ব্যাবস্থায় ফিল্টারিং এর জন্য সাধারনত একবার ব্যাবহারযোগ্য পেপার
ফিল্টার ব্যাবহৃত হয়। এই সম্পুর্ন ব্যাবস্থাটি যাতে
স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালনা হতে পারে এবং কোন ট্যাঙ্কেই কুল্যান্টের ওভার-ফ্লো বা ড্রাই
না হয়, তার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেন্সর যেমন ফ্লোট সুইচ, প্রেশার সুইচ ইত্যাদি
ব্যাবহার করা হয়। কুল্যান্ট ফিল্টারেশান ইউনিট ব্যাবহারের ফলে যেমন
কুল্যান্টের কুলিং প্রপার্টি সহজে নষ্ট হয় না, তার সাথেই মেশিনিং এর উৎকর্ষতা ও
কাটিং টুলের লাইফও বৃদ্ধি পায়।

১১। হিট এক্সচেঞ্জার বা কুলিং ইউনিট
CNC মেশিনে হিট এক্সচেঞ্জার বা কুলিং ইউনিট ব্যাবহার করা হয় মূলত হাইড্রোলিক
অয়েল এবং কখনো কাটিং কুল্যান্টকে ঠাণ্ডা করার জন্য। সাধারনত CNC মেশিন যতক্ষণ চালু থাকে, ততক্ষন হাইড্রোলিক পাম্পও চালু থাকে,
ফলে প্রেশারাইজড হাইড্রোলিক অয়েল অত্যাধিক গরম হয়ে ওঠে। গরম হাইড্রোলিক অয়েলের ফলে সলিনয়েড
ভাল্ব এবং সিলিন্ডারের মধ্যের অয়েল-সিলগুলি (Oil-seal) সহজেই খারাপ হয়ে যায়। তাই মূলত এই অসুবিধা দূর করার জন্য CNC মেশিনে হাইড্রোলিক পাম্প ইউনিটের
সাথে হিট এক্সচেঞ্জার বা কুলিং ইউনিটও কখনো কখনো ব্যাবহৃত
হয়। হাইড্রোলিক ট্যাঙ্ক থেকে গরম হাইড্রোলিক অয়েল এই ইউনিটে
পাঠানো হয় এবং ঠাণ্ডা করার পর ওই অয়েল পুনরায় হাইড্রোলিক ট্যাঙ্কে ফেরত পাঠানো হয়,
এবং এটি একটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস। আবার মেশিনিং এর ধরন
অনুযায়ী কাটিং কুল্যান্টকেও কখনো
কখনো ঠাণ্ডা করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে কুল্যান্টের জন্য আলাদা কুলিং ইউনিট CNC মেশিনে ব্যাবহার করা হয়।

CNC মেশিনে হাইড্রোলিক অয়েল ও
কুল্যান্টকে ঠান্ডা করার জন্য দুই ধরনের কুলিং প্রসেস
ব্যাবহৃত হয়, একটি হিট এক্সচেঞ্জ টাইপ ও অপরটি ফ্রিজিং সাইকেল টাইপ। হিট
এক্সচেঞ্জ টাইপ কুলিং প্রসেস আবার দুই ধরনের হয়। একটি
রেডিয়েটর টাইপ হিট এক্সচেঞ্জ ডিভাইস, যেখানে পাইপের মধ্যে দিয়ে গরম হাইড্রোলিক অয়েল পাঠানো হয় এবং ফ্যান ব্যাবহার করা হয় ঐ অয়লকে
ঠাণ্ডা করার জন্য। অপরটি ওয়াটার কুলিং টাইপ, যেখানে পাইপের মধ্যে দিয়ে ঠান্ডা
জল সার্কুলেট করে হাইড্রোলিক অয়েলের ট্যাঙ্কে
পাঠানো হয় ঐ অয়েলকে ঠাণ্ডা করার জন্য। এছাড়া ফ্রিজিং সাইকেল টাইপ কুলিং প্রসেসে হাইড্রোলিক অয়েলের
ট্যাঙ্ক থেকে সার্কুলেশান পাম্পের সাহায্যে হাইড্রোলিক
অয়েলকে কন্ডেন্সরের মধ্যে দিয়ে পাঠিয়ে ঠান্ডা করার পর পুনরায় হাইড্রোলিক অয়েলের ট্যাঙ্কে ফেরত পাঠানো হয়। এছাড়া
CNC মেশিনের কাটিং
কুল্যান্টকে ঠাণ্ডা করার জন্য ডিপিং টাইপ (Dipping
Type) কুলিং প্রসেস ব্যাবহৃত হয়ে থাকে, যেখানে
একটি কুলিং কয়েলকে কুল্যান্ট ট্যাঙ্কের মধ্যে ডুবন্ত অবস্থায় রাখা হয়।
১২। ফিল্টার রেগুলেটার লুব্রিকেটার বা FRL ইউনিট
নিউম্যাটিক কম্প্রেশার থেকে যে কম্প্রেসড এয়ার বের হয়, সেটি সাধারনত ময়েশ্চারযুক্ত বা কখনো তাতে ডার্ট
পার্টিকলসও থাকে, যেগুলি CNC মেশিনে লাগানো বিভিন্ন নিউম্যাটিক কম্পোনেন্টস যেমন
ভাল্ব, সিলিন্ডার ইত্যাদিকে সহজেই খারাপ করে দেয়।
এই কারনেই কম্প্রেসড এয়ারকে CNC মেশিনে ব্যাবহার করার
পুর্বে ফিল্টার রেগুলেশন এবং লুব্রিকেশন করার প্রয়োজন হয়। তাই কম্প্রেসড এয়ারকে CNC মেশিনে দেওয়ার আগে এই ফিল্টার রেগুলেটার লুব্রিকেটার
বা সংক্ষেপে FRL নামক একটি ইউনিটের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয়। নিচে CNC মেশিনের সাথে ব্যাবহৃত একটি FRL ইউনিটের ছবি দেওয়া হল।

পুর্বের
দেওয়া
ছবি
অনুযায়ী একটি FRL ইউনিট তিনটি আলাদা আলাদা অংশ দিয়ে তৈরি হয়, এবং অংশ তিনটিকে
আলাদাভাবে একটি কমন বেসের উপর বসানো থাকে ও অংশ তিনটি একে অন্যের সাথে এমনভাবে
সংযোগ থাকে যাতে প্রথম ইউনিটের আউটপুট লাইন পরবর্তি ইউনিটের ইনপুট হয়। FRL ইউনিটে ব্যাবহৃত ইউনিট তিনটি
হল ফিল্টার ইউনিট,
রেগুলেটার ইউনিট এবং লুব্রিকেটার ইউনিট। এছাড়াও
FRL ইউনিটের সাথেই একটি প্রেশার গেজও লাগানো থাকে, যেটা
কিনা FRL ইউনিট থেকে নির্গত বা মেশিনে প্রদত্ত এয়ার প্রেশারের মান নির্দেশ করে
থাকে।
কম্প্রেসড এয়ারকে প্রথমেই FRL ইউনিটের প্রথম অংশ অর্থাৎ ফিল্টার ইউনিটের মধ্যে পাঠানো হয়। এই ফিল্টার ইউনিট কম্প্রেসড এয়ারের মধ্যে
মিশ্রিত ময়েশ্চার, ডার্ট, অয়েল ইত্যাদিকে আলাদা করে দেয়। এই উদ্দেশে ফিল্টার ইউনিটে
সাধারনত তিন ধরনের ফিল্টার ব্যাবহার করা হয়, এগুলি হল জেনারেল পারপাস ফিল্টার (যা
কিনা কম্প্রেসড এয়ারের মধ্যের ওয়াটার পার্টিকেল এবং ডার্ট কে দূর করে থাকে),
কোয়ালিসিং (Coalescing) ফিল্টার (যা কিনা অয়েল পার্টিকেল কে দূর করে) এবং ভেপার রিমুভাল ফিল্টার
(যেটা অয়েল ভেপার এবং কম্প্রেসড এয়ারের মধ্যের দূর্গন্ধ কে দূর করে), এবং এরপর
কম্প্রেসড এয়ারকে রেগুলেটার ইউনিটে পাঠানো
হয়।
রেগুলেটার ইউনিটের সাহায্যে কম্প্রেসড এয়ারের
প্রেশারকে সাধারনত কম করে রাখা হয়। এই কারনেই রেগুলেটার ইউনিটকে প্রেশার রিডিউসিং ভাল্বও (pressure reducing valves) বলা হয়। FRL
ইউনিটের ইনপুটে
এয়ার প্রেশারের সামান্য তারতম্য (fluctuations) ঘটলেও এই প্রেশার রেগুলেটার
সবসময়েই FRL ইউনিটের আউটপুটে
একটি স্থির (constant) এয়ার প্রেশার দিয়ে থাকে। সাধারনত দুই ধরনের প্রেশার রেগুলেটার FRL ইউনিটে ব্যাবহার করা হয়। এগুলি হল রিলিভিং টাইপ এবং নন-রিলিভিং টাইপ। রিলিভিং টাইপ রেগুলেটারে অতিরিক্ত এয়ার প্রেশারকে অ্যাটোমস্ফিয়ারে সরাসরি
ছেড়ে দেওয়া হয়, তাই এই ধরনের রেগুলেটারে সবসময়েই একটি হিসিং সাউন্ড হয়। কিন্তু নন-রিলিভিং টাইপ রেগুলেটারে অতিরিক্ত এয়ার প্রেশারকে
অ্যাটোমস্ফিয়ারে ছাড়া হয় না, এর জন্য আলাদা ব্যাবস্থা করা হয়।
সমস্ত এয়ার টুল, সিলিন্ডার, ভাল্ব, এয়ার
মোটর ইত্যাদির লুব্রিকেশান প্রয়োজন হয় স্মুদ রানিং এবং সাথে সাথে তাদের স্বাভাবিক
লাইফকেও এক্সটেন্ড করার জন্য। FRL ইউনিটে এয়ারলাইন লুব্রিকেটার ঠিক সেই কাজটিই করে
থাকে। এই ইউনিটে একটি পাত্রে লুব্রিকেটিং অয়েল রাখা হয় এবং খুব সামান্য পরিমান
অয়েল প্রেসারাইজড এয়ারের সাথে সাথে মেশিনে পাঠানো হয়। সাধারনত
দুই ধরনের এয়ারলাইন লুব্রিকেটার সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়, এগুলি হল অয়েল-ফগ এবং
মাইক্রো-ফগ লুব্রিকেটার সিস্টেম। সাধারনত হেভি অ্যাপ্লিকেশানের ক্ষেত্রে অয়েল-ফগ
লুব্রিকেটার সিস্টেম ব্যাবহার করা হয় কারন এই ব্যাবস্থায় বেশি পরিমান লুব্রিকেশান
অয়েল প্রেসারাইজড এয়ারের সাথে মেশানো হয়, কিন্তু মাইক্রো-ফগ লুব্রিকেটার সিস্টেমে
একদম সামান্য পরিমান লুব্রিকেশান অয়েল মেশানো হয় এবং সাধারনত যেখানে মেশিনে
প্রেসারাইজড এয়ার কম ব্যাবহৃত হয়, সেখানে FRL ইউনিটের সাথেই
এই ব্যাবস্থা যুক্ত থাকে।
১৩। কাউন্টার
ব্যালেন্স সিস্টেম
CNC মেশিনে কাউন্টার ব্যালেন্স সিস্টেম ব্যাবহার করা হয় মূলত
ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসের উপর প্রদত্ত লোডকে ব্যালান্স করার জন্য। ভার্টিক্যাল
CNC মেশিনের
ক্ষেত্রে সাধারনত ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিস বা “Z” অ্যাক্সিসের সাথে এবং
হরাইজন্টাল CNC মেশিনের
ক্ষেত্রে “Y” অ্যাক্সিসের সাথে এই কাউন্টার
ব্যালেন্স সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়। অ্যাক্সিসের উপরের এই লোড সাধারনত
ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসের সাথে যুক্ত স্পীন্ডল হেডস্টক ও অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজের
জন্য হয়ে থাকে। যখন ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিস নিচের দিকে মুভমেন্ট করে তখন
গ্র্যাভিটির জন্য অ্যাক্সিসের মুভমেন্ট সহজ হয়, কিন্তু ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসটির উপর দিকে মুভ করার সময় গ্র্যাভিটির বিপরিতে যাওয়ার জন্য
সার্ভো মোটরের ওপর লোড প্রচুর বেড়ে যায়, ফলে বড় বা বেশী ক্ষমতার সার্ভো মোটরের
প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মূলত এই কারনেই CNC মেশিনের
ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসের সাথে কাউন্টার ব্যালেন্স সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়। সাধারনত কাউন্টার ব্যালেন্স যুক্ত ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসের মুভমেন্ট
তুলনামুলক অনেক স্মুদ হয়। মেশিনের ডিজাইন অনুসারে CNC মেশিনে
বিভিন্ন ধরনের কাউন্টার ব্যালেন্স সিস্টেম ব্যাবহৃত হয়, এগুলি নিম্নরূপ।
কাউন্টারওয়েট - এই ব্যাবস্থায় একটি সলিড লোহার ওজন রোলার চেইন বা কেবিলের
সাহায্যে ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসের সাথে এমনভাবে ঝোলানো থাকে যাতে অ্যাক্সিসের
উপরের দিকে মুভমেন্টের সময় এটি নিচে নামে এবং অ্যাক্সিসের নিচেরদিকে মুভমেন্টের
সময় লোহার ওজনটি ওপর দিকে ওঠে। যদিও এটি একটি পুরনো ব্যাবস্থা, এবং
বর্তমানে এটির ব্যাবহার প্রায় নেই বললেই চলে।
গ্যাস
স্প্রিং - এখানে একটি সিলিন্ডারের মধ্যে
নাইট্রোজেন গ্যাস এবং খুব সামান্য পরিমানে হাইড্রোলিক অয়েল সম্পুর্ন সিলড অবস্থায়
থাকে। সিলিন্ডারের পিস্টনের মুভমেন্টের সাথে সাথে সিলিন্ডারের
মধ্যের ওই নাইট্রোজেন গ্যাসের ওপর চাপ কম বা বেশী হয়, ফলে স্প্রিং অ্যাকশান তৈরি
হয় এবং এটি মেশিনের অ্যাক্সিসের সাথে লাগানো হলে তা কাউন্টার ব্যালেন্স হিসাবে কাজ
করে। পিস্টনের মধ্যেকার তেল লুব্রিকেশান ও পিস্টনের স্মুদ
মুভমেন্টে সাহায্য করে।
হাইড্রোলিক
/ নিউম্যাটিক সিলিন্ডার - এই
ব্যাবস্থায় একটি সিংগল অ্যাক্টিং হাইড্রোলিক বা নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের পিস্টনকে
ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসের সাথেই কাউন্টার লোড হিসাবে সংযুক্ত করা থাকে।
১৪। ম্যানুয়াল
পালস জেনারেটার
এটিকে হ্যান্ড হুইল (Hand Wheel) ইউনিটও
বলা হয়। CNC মেশিনে এর
সাহায্যে অ্যাক্সিসের মুভমেন্ট বাটন প্রেস না করেও একটি হুইলকে
ঘুরিয়ে অ্যাক্সিসকে মুভ করানো হয়। হুইলের
ঘুর্ননের ফলে এটি সাধারনত স্কয়ার ওয়েভ ইলেক্ট্রিক্যাল পালস জেনারেট করে। CNC মেশিনে ওই পালসকে অ্যাক্সিসের মুভমেন্টের কমান্ড হিসাবে
নেওয়া হয়। মেশিনের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়াল পালস
জেনারেটার পাওয়া যায়, যেমন মেকানিক্যাল, ম্যাগনেটিক, অপ্টিক্যাল ইত্যাদি। একটি
লম্বা কেবিলের সাহায্যে এটি সাধারনত CNC
কন্ট্রোলারের সাথেই সংযোগ করা থাকে এবং বিশেষ কিছু পরিস্থিতিতে CNC মেশিনকে অপারেটার প্যানেল থেকে দূরে থাকা অবস্থায় অ্যাক্সিসকে মুভ করানোর জন্য সাধারনত এটির ব্যাবহার করা হয়। ইউনিটটির
মধ্যে কোন অ্যাক্সিসকে মুভ করতে হবে তার জন্যও
যেমন একটি অ্যাক্সিস সিলেক্টর সুইচ থাকে, তেমনই হুইলের প্রতিটি পালসে অ্যাক্সিস
কতটা মুভ করবে তা কম বেশী করার জন্যও ইনক্রিমেন্ট সেটিং সুইচ থাকে।
নিচে CNC মেশিনে ব্যাবহৃত একটি ম্যানুয়াল
পালস জেনারেটারের ছবি দেওয়া হল।
১৫। সুইচড মোড
পাওয়ার সাপ্লাই বা SMPS
CNC মেশিনে 24Volt DC পাওয়ার
সাপ্লাইয়ের জন্য সাধারনত সুইচড মোড পাওয়ার সাপ্লাই বা SMPS ব্যাবহার করা হয়। এই SMPS এর ইনপুট ভোল্টেজ সিংগল ফেজ AC বা
থ্রি-ফেজ AC এই দুই ধরনেরই হতে পারে। CNC মেশিনে এই ধরনের পাওয়ার সাপ্লাই ব্যাবহারের সবথেকে বড় সুবিধা হল এই যে, একই পরিমান কারেন্ট রেটিং এর জন্য সাধারন
পাওয়ার সাপ্লাইয়ের তুলনায় এগুলি সাইজে খুব ছোট হয় এবং এফিসিয়েন্সিও বেশী হয়,
তাছাড়া ইনপুট ভোল্টেজের তারতম্য ঘটলেও এগুলিতে সবসময় কন্সট্যান্ট আউটপুট ভোল্টেজ
পাওয়া যায়। তাই প্রায় সব ধরনের CNC
মেশিনেই SMPS ব্যাবহার করা হয়।

যে কোন SMPS এরই চারটি প্রধান অংশ রয়েছে, এগুলি হল যথাক্রমে ইনপুট
রেক্টিফায়ার, ইনভার্টার, ভোল্টেজ কনভার্টার এবং আউটপুট রেগুলেটর। ইনপুট রেক্টিফায়ার অংশে ইনপুট AC ভোল্টেজকে
রেক্টিফায়ারের সাহায্যে প্রথমে DC ভোল্টেজে পরিনত করা হয়। এরপর ইনভার্টার অংশে ঐ DC ভোল্টেজকে
পাওয়ার অসিলেটরের সাহায্যে পুনরায় হাই ফ্রিকোয়েন্সির AC ভোল্টেজে পরিনত করা হয়। এরপর ভোল্টেজ কনভার্টার সেকশানে ঐ AC ভোল্টেজকে
একটি হাই ফ্রিকোয়েন্সি ট্রান্সফর্মারের ইনপুটে দেওয়া হয় এবং ঐ ট্রান্সফর্মারের
আউটপুট থেকে (SMPS এর আউটপুট DC ভোল্টেজএর মান অনুযায়ী) কম ভোল্টেজের AC নেওয়া হয় এবং সাথে সাথে
রেক্টিফায়ারের সাহায্যে ঐ AC ভোল্টেজকে DC ভোল্টেজে পরিনত করা হয়। আউটপুট রেগুলেটর অংশে আউটপুট DC ভোল্টেজকে
সবসময় মনিটরিং করা হয় এবং অটোমেটিক রেগুলেট করা হয় যাতে সবসময় SMPS এর আউটপুটে
কন্সট্যান্ট DC ভোল্টেজ পাওয়া যায়।
১৬। সার্ভো কন্ট্রোল্ড ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার
CNC মেশিনের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য সাধারনত থ্রি-ফেজ সার্ভো কন্ট্রোল্ড
ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার ব্যাবহার করা হয়। ইনপুট থ্রি-ফেজ AC
ভোল্টেজের সামান্য তারতম্য ঘটলেও এই ধরনের স্টেবিলাইজার থেকে সবসময়েই কন্সট্যান্ট
থ্রি-ফেজ AC ভোল্টেজ আউটপুট পাওয়া যায়। এই ধরনের স্টেবিলাইজার
মুলত পাঁচটি কম্পোনেন্টের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়, এগুলি হল বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমার,
অটো ট্রান্সফরমার, মোটর, মোটর ড্রাইভার এবং কন্ট্রোল সার্কিট পাওয়ার সাপ্লাই। বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমারকে মেইন লাইনের ইনপুট এবং স্টেবিলাইজারের লোড টার্মিনাল
আউটপুটের সাথে সংযোগ করা থাকে এবং অটো ট্রান্সফর্মার মেইন ইনপুট লাইনের ফেজ এবং
নিউট্রালের মধ্যে যুক্ত করা হয়। বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ওয়ান্ডিং এর একটি দিক মোটরের সাহায্যে
আর্ম অ্যান্ড ব্রাশ মেকানিজম পদ্ধতিতে অটো ট্রান্সফর্মারের উপরে ঘুরতে পারে। মোটর ড্রাইভার হল একটি ইলেক্ট্রনিক সার্কিট যা কিনা ঐ মোটরের মুভমেন্টকে
কন্ট্রোল করে। এবং সবশেষে কন্ট্রোল সার্কিট পাওয়ার সাপ্লাই এর সাহায্যে
বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক সার্কিটে কন্সট্যান্ট DC ভোল্টেজ সাপ্লাই দেওয়া হয়। পরের
পাতায় একটি সার্ভো কন্ট্রোল্ড ভোল্টেজ স্টেবিলাইজার ও তার
ব্লক ডায়াগ্রাম দেওয়া হল।

এখানে
একটি অটোমেটিক ভোল্টেজ রেগুলেটার সার্কিট সর্বক্ষন মেইন লাইনের ইনপুট ভোল্টেজকে
সেন্স করে এবং তার ফিডব্যাক মোটর ড্রাইভার সার্কিটকে ট্রিগার করতে ব্যাবহার করে। স্টেবিলাইজারের ইনপুট ভোল্টেজের তারতম্য অনুযায়ী ঐ মোটর ড্রাইভার সার্কিট
অটো ট্রান্সফর্মারের উপর মোটরের শ্যাফটকে অর্থাৎ আর্ম অ্যান্ড ব্রাশকে ঘুরিয়ে থাকে। এর ফলে বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ওয়ান্ডিংএ ভোল্টেজের তারতম্য
ঘটে , কারন বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ওয়ান্ডিং এর একটি দিক ঐ আর্ম
অ্যান্ড ব্রাশ মেকানিজমে অটো ট্রান্সফর্মারের সাথেই যুক্ত থাকে। আবার বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ওয়ান্ডিংএ ভোল্টেজের তারতম্যের
ফলে ঐ ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারিতেও ভোল্টেজের তারতম্য ঘটে। এখন মেইন লাইনের ইনপুট ভোল্টেজের কম বা বেশীর উপর নির্ভর করে মোটরের
শ্যাফটের মুভমেন্ট এমন হয়, যাতে কিনা বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমারের সেকেন্ডারি
ওয়ান্ডিংএ সর্বদাই একটি কন্সট্যান্ট আউটপুট ভোল্টেজ পাওয়া যায়। থ্রি-ফেজ AC ভোল্টেজের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ফেজের জন্য এই ধরনের তিনটি
আলাদা বাক/বুস্ট ট্রান্সফরমার, আলাদা কন্ট্রোল সার্কিট এবং আলাদা অটো
ট্রান্সফর্মার ও মোটর ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
১৭। ডাটা কমিউনিকেশান ডিভাইস
যে কোন CNC মেশিনেই বাইরে থেকে ডাটা কমিউনিকেশান করার প্রয়োজন হয় মেশিনের
বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম বা মেশিন প্যারামিটার আপলোড এবং ডাউনলোড করার জন্য। এবং এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের কমিউনিকেশান ডিভাইস ব্যাবহৃত হয়। CNC মেশিনে ডাটা কমিউনিকেশান করার জন্য সবথেকে বেশী ব্যাবহৃত কমিউনিকেশান
পদ্ধতিগুলি হল USB কমিউনিকেশান,
কম্প্যাক্ট ফ্ল্যাশ কার্ড (CF Card)
কমিউনিকেশান এবং RS 232 কমিউনিকেশান।

USB কমিউনিকেশান পদ্ধতিতে কোন এক্সটার্নাল স্টোরেজ
ডিভাইস যেমন পেন-ড্রাইভ ইত্যাদি থেকে সরাসরি মেশিনে কোন ডাটা বা প্রোগ্রাম দেওয়া
বা নেওয়া হয় এবং ফ্ল্যাশ কার্ড কমিউনিকেশান পদ্ধতিতেও কম্প্যাক্ট ফ্ল্যাশ কার্ড
থেকে সরাসরি মেশিনে কপি ও পেস্ট (Copy &
Paste) পদ্ধতিতে কোন ডাটা বা প্রোগ্রাম
দেওয়া বা নেওয়া হয়। কিন্তু RS 232 কমিউনিকেশান হল কোন CNC মেশিনে পুরনো এবং সবথেকে নির্ভরযোগ্য ও বহুল ব্যাবহৃত
কমিউনিকেশান পদ্ধতির একটি। এই পদ্ধতিতে CNC কন্ট্রোলার থেকে
একটি পোর্টের সাহায্যে (যাকে RS 232 কমিউনিকেশান পোর্ট বলা হয়) বাইরের কোন
এক্সটার্নাল ডাটা কমিউনিকেশান ডিভাইস বা কম্পিউটারের সাথে কেবলের সাহায্যে সিরিয়াল কমিউনিকেশান করা হয়। ডাটা কমিউনিকেশানের জন্য ঐ কমিউনিকেশান ডিভাইস বা কম্পিউটারেও এর জন্য
একটি RS 232 সিরিয়াল কমিউনিকেশান পোর্ট থাকা
প্রয়োজন। এছাড়া কম্পিউটারে একটি বিশেষ
ডাটা কমিউনিকেশান সফটওয়্যার যেমন “Winpcin” ইত্যাদি ডাটা কমিউনিকেশানের জন্য
ব্যাবহৃত হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে ডাটা কমিউনিকেশান
যদিও বেশ অসুবিধাজনক কিন্তু তবুও এই পদ্ধতি খুবই নির্ভরযোগ্য, কারন এক্ষেত্রে এক্সটার্নাল
স্টোরেজ ডিভাইস বা কম্পিউটার থেকে CNC কন্ট্রোলারে ভাইরাস প্রোগ্রাম সংক্রমনের সম্ভাবনা প্রায়
নেই বললেই চলে। তাই বহু
গুরুত্বপুর্ন CNC মেশিনের ক্ষেত্রে এখনও কেবলমাত্র এই পদ্ধতিতেই ডাটা কমিউনিকেশান
করা হয়ে থাকে।
১৮। প্রোবিং সিস্টেম
বর্তমানে প্রায় সব ধরনের দামী CNC মেশিনেই প্রোবিং
সিস্টেম ব্যাবহৃত হয়। প্রোবিং সিস্টেম ব্যাবস্থা CNC মেশিনের একটি এক্সটার্নাল অ্যাক্সেসরিজ যা
কিনা মেশিনের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রোবিং সিস্টেমের সাহায্যে মেশিনের মধ্যে স্থিত ওয়ার্কপিসের বিভিন্ন
ডাইমেনশান খুবই সূক্ষভাবে নেওয়া যায়, ফলে মেশিনিং পর ওয়ার্কপিসের ডাইমেনশানের
অ্যাকুইরেসিও অনেক বেশী হয়। একটি সম্পুর্ন প্রোবিং সিস্টেম প্রোব ইউনিট, রিসিভার ইউনিট এবং মেশিন
ইন্টারফেস ও কন্ট্রোলার এই তিনটি ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি হয়। প্রোবিং সিস্টেম সাধারনত প্রোব থেকে
সিগন্যাল ট্রান্সমিটিং টাইপের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন
অপ্টিক্যাল, রেডিও, ইন্ডাক্টিভ এবং ডাইরেক্ট সিগন্যাল ট্রান্সমিটিং ইত্যাদি। নিচে একটি CNC মেশিনে বহুল ব্যাবহৃত
অপ্টিক্যাল সিগন্যাল ট্রান্সমিটিং প্রোবিং সিস্টেমের ছবি দেওয়া হল।

আগেই বলা হয়েছে প্রোবিং
সিস্টেমের সাহায্যে মেশিনের ওয়ার্কপিসের সুক্ষ মেজারমেন্ট নেওয়া হয়। এই ব্যাবস্থায় যে প্রোব ইউনিটটি ব্যাবহার করা হয়, সেটির গঠন এমনভাবে করা হয়
যাতে স্টাইলাসের (Stylus ) যে কোন ডাইরেকশানে এক মাইক্রন (.001 mm) মুভমেন্ট হলেই
সেটি একটি অপ্টিক্যাল সিগন্যাল জেনারেট করে এবং সেই সিগন্যাল অপ্টিক্যাল ইন্টারফেস
মডিউলের সাহায্যে সরাসরি মেশিন ইন্টারফেস মডিউলে পাঠানো হয়। এই ব্যাবস্থায় প্রোব ইউনিটের সাথে অপ্টিক্যাল ইন্টারফেস মডিউলের সরাসরি কোন
তারের সংযোগ থাকে না কিন্ত মেশিন ইন্টারফেস মডিউল CNC কন্ট্রোলারের সাথে সরাসরি
তথ্য আদানপ্রদান করে থাকে। এভাবেই CNC কন্ট্রোলার
থেকে যখন অ্যাক্সিসের মুভমেন্ট করানো হয়, তখন ওয়ার্কপিসের বিভিন্ন ডাইমেনশান মেশিন
জিরো অবস্থান থেকে কত দূরে অবস্থিত তা প্রোবের স্টাইলাস ওয়ার্কপিসের উপরে বিভিন্ন
ডাইমেনশানে স্পর্শ করে তা এক মাইক্রন অ্যাকুইরেসি অবধি পাওয়া সম্ভব হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মেজারমেন্ট করার জন্য প্রোব ইউনিটকে মেশিনের স্পিন্ডলে
অবস্থান করানো হয়, এবং অপ্টিক্যাল ইন্টারফেস মডিউলকে মেশিনের ভিতরেই কিছুটা দূরে
মেশিনের গায়ে ফিক্সিং করা থাকে।
১৯। লেজার কাটার হেড
CNC লেজার কাটিং মেশিনে এটির ব্যাবহার
দেখা যায়, এবং এটি একটি নন-কন্টাক্ট থার্মাল
বেসড মেশিনিং প্রসেস, যা কিনা মেটেরিয়াল কাটিং, মার্কিং এবং এনগ্রেভিং
এর জন্য ব্যাবহার করা হয়, এবং এক্ষেত্রে একটি হাই পাওয়ার এবং ফোকাসড লেজার বিম
ব্যাবহৃত হয়ে থাকে। এখানে লেজার বিমকে একটি লেজার ফোকাসিং লেন্স এবং নজেলের মধ্য
দিয়ে পাঠানো হয় এবং বিভিন্ন অ্যাক্সিস মুভমেন্টের দ্বারা ওয়ার্কপিসের প্রয়োজনীয়
ডাইমেনশান পাওয়া যায়। এর সাথে সাথে কম্প্রেসেড এয়ার ব্যাবহার করা হয় ফোকাসিং
লেন্সকে ঠান্ডা করা ও ভেপরাইজড মেটালকে কাটিং এরিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য।
সাধারনত তিন ধরনের লেজার কাটার ব্যাবহৃত হয়ে থাকে, এগুলি হল CO2 লেজার কাটার, ক্রিস্টাল লেজার
কাটার এবং ফাইবার লেজার কাটার।
CO2 লেজার কাটারে কার্বন ডাই অক্সাইডকে অ্যাক্টিভ লেজার
মিডিয়াম হিসাবে ব্যাবহার করা হয়, এবং এর সাহায্যে হাই পাওয়ার আউটপুট পাওয়া সম্ভব। এই
ধরনের লেজার কাটারের এফিসিয়েন্সি খুব বেশী হওয়ার জন্য এটি একটি কমন টাইপের লেজার
কাটার, তাছাড়া যে কোন ধরনের মেটাল কাটিং এর জন্য এর ব্যাবহার দেখা যায়। ফাইবার লেজার
কাটার, লেজার বিম তৈরির জন্য একটি ডায়োড ব্যাঙ্ক ব্যাবহার করে, যা কিনা একটি ফাইবার অপ্টিক কেবিলের সাহায্যে
পাঠানো হয়। এটি CO2 লেজার কাটিং এর তুলনায় পরিস্কার কাটিং প্রসেস।
ক্রিস্টাল লেজার কাটিং এর ক্ষেত্রে লেজার বিম প্রস্তুত করা হয় Neodymium-doped Yttrium Aluminum
garnet (Nd: YAG) এবং Neodymium-Doped Yttrium Ortho-Vanadate (Nd: YVO) নামক দুটি ক্রিস্টালের সাহায্যে, এবং এটি CO2 লেজারের তুলনায়
হাই-ইন্টেন্সিটি লেজার প্রস্তুত করতে সক্ষম। নিচে CNC মেশিনে ব্যাবহৃত
একটি লেজার কাটার হেডের ছবি দেখানো হল।

২০। ওয়াটার জেট নজেল
CNC ওয়াটার জেট কাটিং মেশিনে এই ধরনের ওয়াটার জেট নজেল
ব্যাবহার করা হয়ে থাকে, এবং এক্ষেত্রে হাই প্রেশার ওয়াটার জেটকে কাজে লাগিয়ে
মেশিনিং অপারেশান সম্পন্ন করা হয়। এখানে কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্লেন হাই
প্রেশার ওয়াটার জেট ব্যাবহৃত হয়, কিছু সফট মেটেরিয়াল যেমন কাঠ, রাবার ইত্যদিকে
কাটার জন্য, আবার কিছু ক্ষেত্রে জলের সাথে অ্যাব্রাসিভ মেটেরিয়াল
যেমন গারনেট (Garnet), অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ইত্যাদি মিশ্রিত করে ব্যাবহার
করা হয় কিছু হার্ড মেটেরিয়ালকে কাটার জন্য। এক্ষেত্রে ওয়াটার জেট নজেলকে CNC মেশিনের বিভিন্ন
অ্যাক্সিসের সাহায্যে চালনা করা হয়, নির্দিষ্ট ওয়ার্কপিসের
ডাইমেনশান পাওয়ার জন্য। এই ধরনের ওয়াটার জেট কাটিং এর জন্য জলের প্রেশার সাধারনত 20,000 থেকে 55,000 PSI রাখা হয়, এবং অ্যাকচুয়াল
কাটিং জলের নিচে সম্পন্ন করা হয়, যাতে নয়েজ এবং স্প্লাশ কম হয়। এক্ষেত্রে হাই প্রেশার
ওয়াটার পাম্প ও একটি স্পেশাল ফিল্টার ইউনিট ব্যাবহৃত হয়, কারন একমাত্র
পরিশ্রুত জলই এই ধরনের কাটিং এর ক্ষেত্রে উপযুক্ত। নিচে একটি CNC মেশিনে ব্যাবহৃত
ওয়াটার জেট নজেলের ছবি দেওয়া হল।
২১। ইলেকট্রিক্যাল ডিসচার্জ মেশিনিং
বা EDM
মেশিনিং প্রসেসের জন্য এখানে ইলেকট্রিক্যাল স্পার্ককে
কাজে লাগানো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ইলেকট্রোড হিসাবে Brass, Copper, Tungsten এর ওয়্যার বা তার ব্যাবহার করা হয়, এবং ওয়ার্কপিস ও ইলেট্রোডের
মধ্যে হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্পার্ক উৎপন্ন করা হয়। ওয়ার্কপিস ও ইলেট্রোডের মধ্যে
উৎপন্ন স্পার্ক খুব সুক্ষ মেটেরিয়াল (ওয়ার্কপিস থেকে) রিমুভ করে নিয়ে
যায়, এবং ফলত মেটেরিয়াল কাটিং সম্পন্ন হয়। এখানে ওয়ার্কপিস অবশ্যই কন্ডাক্টিভ
মেটেরিয়াল হয়ে থাকে, এবং একটি ডাই-ইলেক্ট্রিক ফ্লুইড মেটেরিয়াল
ব্যাবহার করা হয়, যা কিনা কাটিং এর ফলে উৎপন্ন সুক্ষ মেটেরিয়ালকে কাটিং
জোন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ডাই-ইলেক্ট্রিক ফ্লুইড হিসাবে সাধারনত non-conductive oil অথবা deionized water ব্যাবহৃত হয়ে থাকে। এই ধরনের মেশিনে সুনির্দিষ্ট ওয়ার্কপিস ডাইমেনশানের জন্য
ওয়ার্কপিসকে অথবা তারের কনট্রোল মুভমেন্ট, CNC মেশিনের অ্যাক্সিস হিসাবে
পরিচালিত হয়।
সাধারনত তিন ধরনের EDM প্রসেস দেখতে পাওয়া যায়, এগুলি হল যথাক্রমে Wire Cut EDM, Hole drills EDM, এবং Sinker EDM। Wire Cut EDM মেশিনে copper অথবা brass alloy এর তারের একটি
স্পুল ব্যাবহার করা হয়, যা থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে wire বা তারকে
ওয়ার্কপিসের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়, যা কিনা স্পার্ক উৎপন্ন করে থাকে। Hole Drill EDM এর ক্ষেত্রে একটি
টিউবুলার ইলেকট্রোড এবং তার ভিতর দিয়ে ডাই-ইলেক্ট্রিক মেটেরিয়াল পাঠানো
হয়ে থাকে। Sinker EDM মেশিনের ক্ষেত্রে সাধারনত graphite বা copper ইলেকট্রোড হিসাবে
ব্যাবহৃত হয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে মেশিনিং এর পরে ওয়ার্কপিসের একটি মিরর বা রিভার্স
ইমেজ পাওয়া যায়। নিচে একটি ইলেকট্রিক্যাল
ডিসচার্জ মেশিনিং প্রসেসের ছবি দেওয়া হল।
২২। প্লাজমা টর্চ হেডপ্লাজমা কাটিং হল এমন একটি থার্মাল কাটিং প্রসেস
যেখানে মেটাল কাটিং এর জন্য আয়নাইজড গ্যাস ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। প্লাজমা হল
ইলেক্ট্রিক্যালি কন্ডাক্টিভ আয়নাইজড গ্যাসের মতন পদার্থ, যেখানে গ্যাস
প্রচণ্ড তাপে প্লাজমাতে পরিনত হয়, এবং প্লাজমা কাটারে সাধারনত কম্প্রেসেড এয়ার অথবা
নাইট্রোজেন ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। যখন প্লাজমা টর্চের মধ্যে দিয়ে প্রচন্ড উত্তপ্ত
প্লাজমা আর্ক মেটালের সংস্পর্শে আসে, তখন সেটি মেটালকে গলিয়ে দেয় এবং
হাই-স্পিড গ্যাস ওই গলিত মেটালকে কাটিং এরিয়া থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এখন CNC মেশিনে এই
প্লাজমা টর্চের কন্ট্রোল্ড মুভমেন্টের সাহায্যে ওয়ার্কপিসের প্রয়োজনীয় ডাইমেনশান
পাওয়া যায়। CNC প্লাজমা কাটিং মেশিনে সাধারনত পাইলট আর্ক পদ্ধতি (Pilot Arc Method) ব্যাবহার করা হয়া থাকে। এই পদ্ধতিতে প্লাজমা টর্চের মধ্যেই হাই-ভোল্টেজের
সাহায্যে স্পার্ক উৎপন্ন করা হয় এবং একটি লো-কারেন্ট সার্কিট অল্প পরিমানের
প্লাজমা তৈরি করে। এরপর প্রকৃতপক্ষে কাটিং এর জন্য সঠিক প্লাজমা উৎপন্ন হয়, যখন পাইলট আর্ক
ওয়্যার্কপিসের সংস্পর্শে আসে, এবং সেখানে স্প্রিং লোডেড প্লাজমা টর্চ ওয়ার্কপিসের
সাথে শর্ট-সার্কিট উৎপন্ন করে এবং কারেন্ট ফ্লো শুরু হয়। নিচে CNC মেশিনে ব্যাবহৃত
একটি প্লাজমা টর্চ হেডের ছবি দেওয়া হল।

২৩। রোবোটিক
আর্ম
রোবোটিক আর্ম সাধারনত কোন নির্দিষ্ট কাজকে সঠিক এবং
দ্রুত বা কিছু ক্ষেত্রে বারংবার সম্পন্ন করার জন্য ব্যাবহার করা হয়। বর্তমানে
মেশিনিং ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন ধরনের রোবোটিক আর্মের ব্যাবহার দেখা যায়, যেগুলির মধ্যে
কার্টেসিয়ান, ডেল্টা, ফাস্ট-পিক এবং
কোলাবরেটিভ (Cartesian, Delta, Fast pick & Collaborative) রোবোটিক আর্ম
উল্লেখযোগ্য। কার্টেসিয়ান রোবোটিক আর্মের সাধারনত তিনটি লিনিয়ার অ্যাক্সিস থাকে, যেগুলি নিজেদের
মধ্যে রাইট-অ্যাঙ্গেলে মুভমেন্ট করতে সক্ষম এবং তিনটি স্লাইডিং
জয়েন্টের সাহায্যে রিস্টের আপ-ডাউন, ইন-আউট এবং ব্যাক-ফোর্থ মুভমেন্ট
পাওয়া যায়। পিক অ্যান্ড প্লেস এবং প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিতে সাধারনত ডেল্টা রোবোটিক
আর্মের ব্যাবহার দেখা যায়, এবং এগুলিরও সাধারনত তিনটি হালকা অ্যাক্সিস থাকে, যা কিনা মেইন রোবোট
বডির থেকে নিচের দিকে ঝুলে কাজ করে থাকে। ফাস্ট-পিক রোবোটিক আর্মের সাহায্যে
খুব দ্রুত কোন বস্তুকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয়। এছাড়া
কোলাবরেটিভ রোবোটিক আর্মের সাহায্যে safely এবং securely বিভিন্ন ধরনের
এবং অনেকগুলি কাজ একসাথে করা সম্ভব এবং এগুলি অনেকটা মানুষের হাতের মতই কাজ করে
থাকে। নিচে একটি রোবোটিক আর্মের ছবি দেওয়া হল, যা কিনা CNC মেশিনের
প্রিন্সিপালে কাজ করে থাকে।
