বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১

কন্ট্রোল সিস্টেম

আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজে ও বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যে সমস্ত ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসগুলি ব্যাবহার করে থাকি, সেগুলিকে অবশ্যই কন্ট্রোল করার প্রয়োজন হয় এই কন্ট্রোল করা বলতে যেমন ডিভাইসটিকে চালু বা বন্ধ করা বোঝায়, তেমনই ডিভাইসটির চালু থাকার সময়, তাপমাত্রার অবস্থা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করাও এর আওতায় পড়ে এছাড়াও আলো, ধ্বনি ইত্যাদিও কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার মধ্যে পড়ে থাকে, নতুবা ডিভাইসগুলিকে সঠিকভাবে ব্যাবহার করা সম্ভব হয় না উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, একটি রুম এয়ার কন্ডিশনারকে যদি কন্ট্রোল করার কোন ব্যাবস্থা না থেকে থাকত, বা কোন মিউজিক সিস্টেমের ভলিউমকে  যদি কন্ট্রোল করা না যেত, তবে সেগুলি ব্যাবহার করা খুবই অসুবিধাজনক হততাই যে কোন ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সাথেই একটি করে কন্ট্রোল ব্যাবস্থা থাকাও একান্তই আবশ্যিক যে কোন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থা মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, ম্যানুয়াল কন্ট্রোল এবং অটোমেটিক কন্ট্রোল

 ম্যানুয়াল কন্ট্রোল

এই ব্যাবস্থায় ডিভাইসটিকে ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করা হয়, অর্থাৎ প্রয়োজন অনুসারে ডিভাইসটিকে নিজের ইচ্ছানুসারে ম্যানুয়ালি চালু বা বন্ধ করা যায় উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি লাইটকে সুইচের সাহায্যে জ্বালানো বা নেভানো বা একটি মোটর স্টার্টারের সুইচকে চাপ দিয়ে মোটরটিকে চালু বা বন্ধ করা অথবা রেগুলেটারের সাহায্যে একটি ফ্যানের ঘোরার স্পিডকে কম বা বেশী করা ইত্যাদি

 অটোমেটিক কন্ট্রোল

এই ব্যাবস্থায় ডিভাইসকে সাধারনত কিছু নির্দিষ্ট অবস্থান বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কন্ট্রোল করা হয় অর্থাৎ একটি ডিভাইসকে কোন একটি বিশেষ সময় অনুসারে চালু বা বন্ধ করা বা তাপমাত্রা অনুসারে চালু থাকার ব্যাবস্থা করা অথবা লাইট বা আলোর তীব্রতা অনুসারে ডিভাইসটিকে কাজ করানো ইত্যাদি, স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থার মধ্যে পড়ে যদিও প্রতিটি স্বয়ংক্রিয় ব্যাবস্থার সাথে সাথেই ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল ব্যাবস্থাও থাকে অর্থাৎ এটি একটি স্বয়ংক্রিয় এবং ম্যানুয়াল এই দুই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থার সহাবস্থান উদাহরণস্বরূপ কোন একটি ব্যাবস্থাকে ম্যানুয়ালি স্টার্ট  বা চালু করা হতে পারে আবার একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় পৌঁছানোর পর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হতে পারে কোন ডিভাইস বা মেশিনকে অটোমেটিক কন্ট্রোলিং এর জন্য সাধারনত তিন ধরনের ব্যাবস্থা দেখা যায়, এগুলি হল নিম্নরূপ

 রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টর

 মাইক্রো-কন্ট্রোলার

 প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC

 রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টর

রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টরের সাহায্যে খুব সহজেই কোন ডিভাইসের স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থা করা যায়, এবং এই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থা বিভিন্ন যায়গায় দেখতে পাওয়া যায় এই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থায় সাধারনত বিভিন্ন ছোট ছোট লজিক্যাল অপারেশান  খুব সহজেই করা সম্ভব তবে এই ধরনের ব্যাবস্থার মূল অসুবিধা হল রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টরগুলি অনেকগুলি তারের সাহায্যে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে, ফলে  কোন লজিক্যাল অপারেশানের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে, তা খুবই অসুবিধাজনক ও সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়ে এছাড়াও কোন বড় এবং জটিল লজিক্যাল অপারেশানের ক্ষেত্রেও এই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থা খুবই অসুবিধাজনক  যদিও খুব ছোট ছোট অটোমেটিক মেশিনে যেখানে ছোট লজিক্যাল অপারেশানের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে এখনো এই ধরনের রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টরের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থা দেখতে পাওয়া যায় নিচে এই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার একটি ছবি দেওয়া হল।

        

 মাইক্রো-কন্ট্রোলার

মাইক্রোকন্ট্রোলার সম্পর্কে এই বইটির প্রথম পার্টে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে মাইক্রো-কন্ট্রোলারকে একটি স্পেশাল পারপাস কম্পিউটার বলা যেতে পারে, যা কিনা একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্যই ব্যাবহার করা যায় অর্থাৎ মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট মেশিনের কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট কাজের নির্দেশ দেওয়া থাকে, এবং ওই মেশিনটি কেবলমাত্র মাইক্রো-কন্ট্রোলারের দেওয়া নির্দেশ অনুসারেই কাজ করে উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রো-ওয়েভ ওভেন ইত্যাদি, যেখানে স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থার জন্য মাইক্রো-কন্ট্রোলার ব্যাবহৃত হয় এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থার ব্যাবহার যদিও সরল এবং খুবই সুবিধাজনক, কিন্তু এই ব্যাবস্থার মূল অসুবিধা হল মেশিনটির স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থা কেবলমাত্র মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মধ্যেকার নির্দেশ অনুসারেই চালিত হয় এবং মেশিন ব্যাবহারকারির পক্ষে ওই মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মধ্যেকার নির্দেশে কোনপ্রকার পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না তাছাড়া জটিল কন্ট্রোলিং অপারেশান এবং যেক্ষেত্রে অনেকগুলি ডিভাইসকে একসাথে এবং বিভিন্নভাবে কন্ট্রোলিং করার প্রয়োজন হয় বা কন্ট্রোলিং সিকোয়েন্স পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে এই ধরনের মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যাবহার করা অসুবিধাজনকনিচে এই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার একটি ছবি দেওয়া হল।

              

 প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC

পূর্বে বর্ণিত দুই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার অসুবিধাগুলি সহজেই PLCর সাহায্যে দূর করা যায় প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC বলতে বোঝায়, একটি স্পেশাল টাইপের ডিজিটাল কন্ট্রোলার, যেখানে কিছু ইনপুট ডিভাইসের (Input Device) অবস্থার উপর নির্ভর করে এবং কন্ট্রোলারের মধ্যে লিখিত প্রোগ্রামের (Program) নির্দেশ অনুসারে কিছু আউটপুট ডিভাইসকে (Output Device) নিয়ন্ত্রন করে কোন মেশিনকে বা প্রসেসকে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন বা অটোমেটিক কন্ট্রোল করা হয় এই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থার সবথেকে বড় সুবিধা হল এর সাহায্যে খুব সহজেই কোন মেশিন বা প্রসেসের ওপর যেমন সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রন পাওয়া যায়, তেমনই প্রয়োজন অনুযায়ী খুব সহজেই ও অল্প সময়ের মধ্যেই অপারেশানের পরিচালন পদ্ধতি বা সিকোয়েন্স অফ অপারেশান পরিবর্তন করা সম্ভব হয় নিচে বিভিন্ন ধরনের কয়েকটি PLCর ছবি দেওয়া হল

             

 যে কোন অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থায় PLC ব্যাবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে, এগুলি নিম্নরুপ

 এটির রেস্পন্স টাইম খুব কম অর্থাৎ এটি খুব দ্রুত কাজ করে

 এক্ষেত্রে অপারেশানাল সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন খুব সহজেই করা সম্ভব

 প্রচলিত রিলে সিস্টেমের তুলনায় ইলেকট্রিক্যাল ওয়ারিং এক্ষেত্রে অনেক কম

 জটিল লজিক্যাল অপারেশান এর সাহায্যে খুব সহজেই করা সম্ভব

 অন্যান্য ডিভাইসের যেমন পিসি বা প্রিন্টার ইত্যাদির এটির সাথে যোগাযোগ সম্ভব

 অপারেশান সিকোয়েন্সে কোন ভুল হলে তা এক্ষেত্রে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়

 বড় ও জটিল অপারেশানের ক্ষেত্রে এই ব্যাবস্থায় তুলনামুলক খরচ অনেক কম

 চালু সিস্টেম থেকে প্রোগ্রাম কপি পেস্টের মাধ্যমে নতুন সিস্টেম দ্রুত চালু করা যায়  

         

বর্তমানে বিভিন্ন মেশিনে, বিভিন্ন প্রসেস প্ল্যান্টে বা ছোটখাটো অন্যান্য অনেক লজিক্যাল অপারেশানে প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC ব্যাবহার করা হয়ে থাকে নিম্নলিখিত ডিভাইসগুলিতে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন বা অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থায় PLCর বহুল ব্যাবহার দেখা যায়

  বিভিন্ন CNC এবং NC মেশিনে

 প্রোডাকশান ও অ্যাসেম্বলি লাইনে

 অটোমেটিক ডোর, লিফট ইত্যাদিতে

 স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যাবস্থায়

 বিভিন্ন জটিল লাইটিং কন্ট্রোল সিস্টেমে

 রোবোটিক আর্মের মুভমেন্টে

 বিভিন্ন ছোট ছোট অটোমেটিক মেশিনে

অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় সব ধরনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন বা অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থায় যেখানে অপারেশানাল সিকোয়েন্সের মাঝে মধ্যে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় বা সিকোয়েন্সিয়াল অপারেশান মনিটরিং করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে PLCর বহুল ব্যাবহার হয়ে থাকে এছাড়াও কোন জটিল মেশিনের ততোধিক জটিল লজিক্যাল অপারেশান ছোট বা বড় বিভিন্ন ধরনের PLC ব্যাবহার করে সহজেই করা হয় PLCর আকার বা মডেল সাধারনত নির্ভর করে থাকে সেটির কত সংখ্যক ইনপুট ও আউটপুট সিগন্যাল নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা (Input and Output Signal Handling capacity), প্রোগ্রামের আকার এবং মেমরি ক্যাপাসিটির (Program Length and Memory capacity) ওপর বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির এবং বিভিন্ন সাইজের ও মডেলের PLC পাওয়া যায় এগুলির মধ্যে SIEMENS, ABB, DELTA, OMRON, BOSCH, MITSUBISHI, TOSHIBA ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য PLC গুলির ভিতরের ইলেক্ট্রনিক সার্কিট অর্থাৎ কন্সট্রাকশান আলাদা আলাদা হলেও সাধারনত এদের সকলের কর্ম্পদ্ধতি মোটামুটিভাবে একই রকমের হয়ে থাকে যদিও হার্ডওয়্যার কনফিগারেশান এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রোগ্রামের সিম্বল ও প্রোগ্রাম লেখার ধরনে এদের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য দেখা যায়যেমন খুব ছোট PLCতে CPU, ইনপুট/আউটপুট পোর্ট ইত্যাদি একটিই মাত্র ছোট মডিউলের মধ্যে সম্মিলিত অর্থাৎ কম্প্যাক্ট অবস্থায় থাকে, কিন্তু বড় PLCর ক্ষেত্রে এগুলির জন্য আলাদা আলাদা মডিউল ব্যাবহার করা হয় এছাড়াও কিছু স্পেশাল টাইপের PLCও বাজারে পাওয়া যায়, যা কিনা সম্পুর্নরূপেই PLC User এর প্রয়োজন অনুসারে PLC ম্যানুফ্যাকচারাররা তৈরি করে থাকেন যেমন CNC মেশিনের ক্ষেত্রে PLC সাধারনত CNC কন্ট্রোলারের মধ্যেই Embedded অবস্থায় থাকে এবং সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে PLC এর CPU বা ইনপুট/আউটপুট মডিউলকে চিহ্নিত করা যায় না তবে এখানে বোঝার সুবিধার জন্য একটি স্বতন্ত্র PLC, যা কিনা কোন CNC কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত না থেকে আলাদা এবং স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে থাকে, সেই সম্পর্কে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে যদিও প্রায় সব ধরনের PLC রই বেসিক কর্মপদ্ধতি মোটামুটি একই থাকে নিচের ছবিতে একটি কমন PLC এবং তার বিভিন্ন কম্পোনেন্ট দেখনো হল।     

              

যে কোন PLCকে বুঝতে হলে প্রথমেই PLCকে দুটি আলাদা ভাগে ভাগ করে নিতে হবে প্রথম ভাগ হল হার্ডওয়্যার পার্ট যা কিনা সাধারনত PLC ম্যানুফ্যাকচারাররা তৈরি করে থাকেন এবং পরবর্তী ভাগ হল Program পার্ট, যা সাধারনত PLC ইউজাররা নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করেন PLCতে প্রোগ্রাম লেখার জন্য সাধারনত একটি Software এর সাহায্য নেওয়া হয়, যা কিনা কোম্পানি অনুসারে ভিন্ন হয় অর্থাৎ কোন কোম্পানির PLC প্রোগ্রাম শুধুমাত্র ওই কোম্পানির তৈরি Software এর সাহায্যেই লেখা সম্ভব, সেক্ষেত্রে অন্য কোন কোম্পানির  Software ব্যাবহার করা যায় না বাজারে যে বিভিন্ন কোম্পানির রেডিমেড PLC পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে যে কোন একটির গঠন এবং প্রোগ্রামিং এর ধরন সম্মন্ধে সম্যক ধারনা থাকলে অন্যগুলিও সহজেই বুঝতে পারা যায় এখানে PLC এবং তার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে যা যা আলোচনা করা হয়েছে, তা SIEMENS এর তৈরি PLCকে মাথায় রেখেই করা হয়েছে, যা কিনা মেশিনিং টুল ইন্ডাস্ট্রিতে সবথেকে বেশী প্রচলিত PLC গুলির মধ্যে একটি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Popular Posts