কোন ভালো ওয়ার্কপিস ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য প্রথমেই যেটা দরকার হয় তা হল ঐ ওয়ার্কপিসের সুক্ষ ডাইমেনশান এবং সুন্দর সারফেস ফিনিশ, যদিও এই ধরনের কাজ কোন কনভেনশনাল মেশিনের সাহায্যে করা খুবই অসুবিধাজনক। আবার যদি কনভেনশনাল মেশিনের সাহায্যে ঐ কাজ করা সম্ভব হয়েও থাকে, তবে তার জন্য এক্সপার্ট অপারেটার, প্রচুর সময় এবং প্রতিনিয়ত ও কাজের প্রতিটি ধাপে ওয়ার্কপিসটির পরিমাপ নেওয়া ইত্যাদির প্রয়োজন হয়ে পড়ে, নতুবা ওয়ার্কপিসটির মেশিনিং এর পরে সন্তোষজনক ফল পাওয়া যায় না। এই কারনেই কনভেনশনাল মেশিনে ব্যাবহৃত বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রোলিং হ্যান্ড-হুইলের পরিবর্তে অটোমেটেড মোশান কন্ট্রোলের প্রয়োজন হয়েছে। NC অথবা CNC মেশিনের সাহায্যে ঠিক সেই কাজটাই করা হয়ে থাকে, অর্থাৎ মেশিনকে এক্ষেত্রে অটোমেটেড মোশান কন্ট্রোল করা হয়, এবং এর ফলস্বরূপ সহজেই NC অথবা CNC মেশিনে মেশিনিং এর ফলে প্রাপ্ত ওয়ার্কপিসের সুক্ষ এবং অ্যাকিউরেট ডাইমেনশন ও সুন্দর সারফেস ফিনিশ পাওয়া যায়।
প্রথম দিকে NC মেশিনের সাহায্যে শুধুমাত্র কিছু বেসিক মেশিনিং অপারেশান যেমন মিলিং
অপারেশান, টার্নিং অপারেশান ইত্যাদি করা হত। কিন্ত পরবর্তীকালে সময়ের সাথে
সাথে একই মেশিনে বিভিন্ন ধরনের সুক্ষ এবং জটিল ম্যানুফ্যাকচারিং এর চাহিদার জন্য
মাল্টি অ্যাক্সিস কন্ট্রোল মেশিনিং অপারেশান করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ফলে ঐ NC মেশিনকেই আলাদা একটি কম্পিউটারের সাথে সংযোগ করে CNC
মেশিন তৈরি করা হয় এবং এর ফলে মেশিনিং অপারেশানের ক্ষেত্রেও অনেক
ফ্লেক্সিবিলিটি পাওয়া যায়। যদিও প্রথম দিককার CNC মেশিনের
সাহায্যেও শুধুমাত্র কিছু বেসিক মেশিনিং অপারেশানই করা হত। কিন্তু পরবর্তী কালে চাহিদার সাথে
তাল মিলিয়ে একই CNC মেশিনে
বিভিন্ন ধরনের মেশিনিং অপারেশান যেমন মিলিং, টার্নিং, ড্রিলিং, বোরিং, ট্যাপিং
ইত্যাদি করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও মেশিনিং অপারেশানের সুবিধার জন্য এবং সময়ের সাশ্রয়ের জন্য কিছু
অতিরিক্ত ব্যাবস্থা যেমন স্বয়ংক্রিয় টুল বা কাটার পরিবর্তন ব্যাবস্থা বা Automatic Tool Changer, স্বয়ংক্রিয় ওয়ার্কপিস পরিবর্তন ব্যাবস্থা বা Automatic Pallet Changer ইত্যাদি ধীরে ধীরে CNC মেশিনের সাথে সংযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বর্তমানে মেশিনিং অপারেশান ছাড়াও আরও বিভিন্ন
ধরনের অপারেশান যেমন লেজার কাটিং, 3D প্রিন্টিং ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের CNC মেশিনের সাহায্যে করা সম্ভব হয়েছে।
মেশিনিং কাকে বলে?
মেশিনিং হল কোন একটি ওয়ার্কপিস থেকে একটি বা অনেকগুলি কাটিং টুলের সাহায্যে
কিছু মেটাল রিমুভ করা, যাতে কিনা ঐ ওয়ার্কপিসের একটি নির্দিষ্ট আকার বা ডাইমেনশান
পাওয়া যায়। ওয়ার্কপিস থেকে মেটাল রিমুভ করার
জন্য বিভিন্ন ধরনের মেশিনিং অপারেশান করা হয়। এগুলি হল মিলিং অপারেশান, টার্নিং অপারেশান, ড্রিলিং অপারেশান, বোরিং
অপারেশান গ্রাইন্ডিং অপারেশান ইত্যাদি। এই সকল প্রকার অপারেশানেই সাধারনত
শিয়ারিং প্রসেসে (shearing process) ওয়ার্কপিস থেকে মেটাল
রিমুভ করা হয়, এবং এই জন্য ওয়ার্কপিস এবং কাটিং টুলের মধ্যে একটি রিলেটিভ মোশানের
(relative motion) প্রয়োজন হয়ে থাকে। মেশিনে সাধারনত ওয়ার্কপিস এবং কাটিং টুল এই দুটির মধ্যে কোন একটিকে খুব ধীরে ধীরে
মুভ করানো হয় এবং অপরটিকে হাই স্পীডে ঘোরানো হয় যাতে ওয়ার্কপিস থেকে শিয়ারিং
প্রসেসে মেটালকে সহজেই রিমুভ করানো যায়।
বেসিক মেশিনিং অপারেশান সাধারনত দুই ধরনের হয়, এদুটি হল টার্নিং অপারেশান এবং মিলিং অপারেশান। টার্নিং অপারেশানের ক্ষেত্রে ওয়ার্কপিসকে মেশিনের মধ্যেই অবস্থিত একটি চাক বা ক্ল্যাম্পিং ডিভাইসের সাথে লাগানো থাকে এবং তাকে হাই স্পীডে ঘোরানো হয়। এরপর কাটিং টুলকে প্রয়োজন অনুযায়ী দুই দিকে মুভ করিয়ে ঐ ওয়ার্কপিস থেকে মেটেরিয়ালকে রিমুভ করা হয়। আবার মিলিং অপারেশানের ক্ষেত্রে কাটিং টুলকে মেশিনের স্পীন্ডলের মধ্যে লাগানো হয় এবং সেটি হাই স্পীডে ঘোরানো হয়, এবং ওয়ার্কপিসকে মেশিনের মধ্যে টেবিলের সাথে লাগানো অবস্থায় দুই দিকে মুভ করানো হয় যাতে কিনা ওয়ার্কপিস থেকে মেটেরিয়াল রিমুভ করা যায়। অর্থাৎ টার্নিং অপারেশানে কাটিং টুল ফিক্সড থাকে ও ওয়ার্কপিস ঘুরন্ত অবস্থায় থাকে এবং মিলিং অপারেশানে কাটিং টুল ঘুরন্ত অবস্থায় থাকে ও ওয়ার্কপিস ফিক্সড থাকে। নিচে এই দুই ধরনের বেসিক মেশিনিং অপারেশানের (Turning & Milling) ছবি দেওয়া হল।
যে কোন মেটাল কাটিং অপারেশানের ক্ষেত্রেই তিনটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয়, এগুলি হল কাটিং স্পীড (cutting speed), ফিড (feed) এবং ডেপথ অফ কাট (depth of cut)। উপরের ছবি অনুযায়ী কাটিং স্পীড হল মিলিং অপারেশানের ক্ষেত্রে কাটিং টুলের ঘোরার স্পীড এবং টার্নিং অপারেশানের ক্ষেত্রে ওয়ার্কপিসের ঘোরার স্পীড, এই স্পীড সাধারনত rpm দিয়ে বোঝানো হয়। ডেপথ অফ কাট বলতে বোঝায় কাটিং টুল, ওয়ার্কপিসের কাটিং সারফেসের মধ্যে কতটা ঢুকে মেটাল কাটা শুরু করবে এবং ফিড বলতে বোঝায় কাটিং টুল এবং ওয়ার্কপিসের মধ্যেকার রিলেটিভ ল্যাটারাল মুভমেন্ট। সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় যে ডেপথ অফ কাট এবং ফিড একসাথে ঠিক করে কাটিং টুল অথবা ওয়ার্কপিসের প্রতিটি রোটেশানে কত পরিমান মেটাল ওয়ার্কপিস থেকে রিমুভ করা যাবে। ওয়ার্কপিসের কাটিং সারফেসের ভালো ফিনিশিং এর জন্য সাধারনত কাটিং টুল অথবা ওয়ার্কপিসের হাই স্পীডের প্রয়োজন হয় এবং ডাইমেনশনাল অ্যাকুইরেসির জন্য কাটিং টুল অথবা ওয়ার্কপিসের অতি সুক্ষ পজিশান এবং ভেলোসিটি কন্ট্রোলের (precise position and velocity control) প্রয়োজন হয়। NC বা CNC মেশিনের সাহায্যে ঠিক এই কাজটাই করা হয়, অর্থাৎ মেটাল কাটিং অপারেশানের সময় NC বা CNC মেশিনের বিভিন্ন অ্যাক্সিসগুলিকে প্রতিনিয়ত বা সবসময় প্রেসাইস পজিশান এবং ভেলোসিটি কন্ট্রোল করা হয়ে থাকে।
নিউম্যারিক্যাল কন্ট্রোল বা NC মেশিন কাকে বলে?
কোন
একটি মেশিনকে যখন আগে থেকে সংখ্যা, অক্ষর এবং প্রতীক দ্বারা তৈরি করা কোন একটি নির্দিষ্ট মেশিনিং প্রোগ্রাম এবং মুভমেন্ট ইন্সটকশানের
সাহায্যে চালানো হয়, তখন সেই মেশিনকে নিউম্যারিক্যাল কন্ট্রোল মেশিন
বা NC মেশিন বলে। অর্থাৎ এককথায় বলতে গেলে NC মেশিন হল এমন একটি প্রোগ্রামযোগ্য অটোমেশন প্রক্রিয়া যা সংখ্যা, অক্ষর এবং প্রতীক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। একটি মেশিনকে নিউম্যারিক্যালি কন্ট্রোল্ড Numerically Controlled বা NC বলা হবে যদি সেটি একটি কোডেড আকারে পাঠানো নির্দেশাবলী অনুযায়ী অটোমেটিক বা সেমিঅটোমেটিক ভাবে কাজ করে। এই কোডেড আকারে পাঠানো নির্দেশাবলী সাধারনত “পাঞ্চ টেপের” (Punch Tape) সাহায্যে দেওয়া হয়ে থাকে। NC মেশিনে
সাধারনত কোন একটি নির্দিষ্ট কাজের অংশ বা সম্পুর্ন কাজের জন্য পরিকল্পিতভাবে নির্দেশাবলীর একটি নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম গঠন করা হয় এবং মেশিনটি ওই প্রোগ্রাম অনুযায়ী নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ
করে থাকে। যখন ঐ
মেশিনে কাজের পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, তখন নির্দেশাবলীর প্রোগ্রামও পরিবর্তিত করতে হয়। বর্তমানে NC মেশিনের ব্যাবহার খুবই সীমিত।
কম্পিউটার নিউম্যারিক্যাল কন্ট্রোল বা CNC মেশিন কাকে বলে?
এককথায় বলতে হলে কম্পিউটার নিউম্যারিক্যাল কন্ট্রোল বা CNC মেশিন হল পূর্বেকার নিউম্যারিক্যাল কন্ট্রোল বা NC মেশিনের মডার্ন ভার্সান, যেখানে মেশিনকে কন্ট্রোল করার জন্য বা চালানোর জন্য “নির্দেশাবলী যুক্ত পাঞ্চ টেপের” পরিবর্তে বিভিন্ন “মাইক্রোপ্রসেসর যুক্ত CNC কন্ট্রোলার, সার্ভো ড্রাইভ এবং প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC” ব্যাবহার করা হয়। এই CNC কন্ট্রোলার, সার্ভো ড্রাইভ এবং PLC সাধারনত একযোগে কাজ করে থাকে এবং মেশিনের বিভিন্ন অ্যাক্সিসের অবস্থান, তাদের স্পীড এবং মেশিনের বিধিন্ন অক্সিলারি ফাংশান যেমন অটোমেটিক টুল চেঞ্জ, অটোমেটিক প্যালেট চেঞ্জ ইত্যাদির সঠিক কর্মসাধন করে। এছাড়াও NC মেশিনের তুলনায় CNC মেশিনে কাটিং টুল এবং ওয়ার্কের নিরবিচ্ছিন্নভাবে মনিটরিং করা হয় এবং বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা প্রোগ্রামও ওই CNC কন্ট্রোলারের মধ্যেই স্টোর করা থাকে ও প্রয়োজন অনুযায়ী ঐ প্রোগ্রামকে সহজেই পরিবর্তন করা সম্ভব হয়। ফলে CNC মেশিনে NC মেশিনের তুলনায় অনেক বেশী ফ্লেক্সিবিলিটি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে একটি CNC মেশিনে কি কি থাকে এবং তা কি ভাবে কাজ করে তা বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে একটি CNC মেশিনিং সেন্টার ও টার্নিং সেন্টারের ছবি দেওয়া হল।
CNC ও NC মেশিনের মধ্যে পার্থক্য কি?
এককথায় বলতে গেলে CNC ও NC মেশিনের মধ্যে অনেকগুলি পার্থক্য রয়েছে, যেমন NC মেশিনকে সাধারনত নির্দেশাবলী যুক্ত ম্যাগনেটিক টেপ বা পাঞ্চ টেপের সাহায্যে চালানো হয়, কিন্তু CNC মেশিনকে চালানোর নির্দেশাবলী কম্পিউটার মেমোরিতে স্টোর করা থাকে, ফলে NC মেশিনের সাহায্যে সাধারনত একই মেশিনে প্রায় একই ধরনের রিপিটিটিভ ওয়ার্ক করা হয়, কিন্তু CNC মেশিনের সাহায্যে একই মেশিনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করা সম্ভব হয়। এছাড়াও CNC মেশিনে উৎপন্ন ওয়ার্কপিসের ডাইমেনশনাল অ্যাকুইরেসি এবং সারফেস ফিনিশও NC মেশিনের তুলনায় অনেক সূক্ষ্ম হয়। অটোমেটিক টুল চেঞ্জ, অটোমেটিক প্যালেট চেঞ্জ ইত্যাদি অতিরিক্ত কিছু ব্যাবস্থা শুধুমাত্র CNC মেশিনেই পাওয়া যায়। এবং সবশেষে কমপ্লেক্স মেশিনিং অপারেশান কেবলমাত্র CNC মেশিনের সাহায্যেই করা সম্ভব।
CNC মেশিন ব্যাবহারের সুবিধাগুলি কি কি?
একটি CNC মেশিন ব্যাবহারে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাওয়া যায়।
· বিভিন্ন ওয়ার্কপিস একই মেশিনে সম্পন্ন করা।
· অনেকগুলি মেশিনের কাজ একই মেসিনে করা।
· নির্দিষ্ট সাইকেল টাইমে কোন কাজকে সম্পন্ন করা, ফলে প্রচুর সময়ের সাশ্রয় হয়।
· মেশিন অপারেটারের স্কিলনেস বা দক্ষতার ওপর নির্ভর না করা।
· ওয়ার্কপিসের অতি সুক্ষ ডাইমেনশনাল অ্যাকুইরেসি পাওয়া যায়।
· মেশিনিং এর ফলে কম স্ক্র্যাপ উৎপন্ন হয়।
· অপারেটারের সেফটি এক্ষেত্রে অনেক বেশী।
· উৎপাদন খরচ তুলনামুলক অনেক কম।
CNC মেশিন ব্যাবহারের অসুবিধাগুলি কি কি?
বর্তমানে যদিও বিভিন্ন মেশিনিং অপারেশানের জন্য CNC মেশিন বহুল ব্যাবহার করা হচ্ছে, কিন্তু CNC মেশিন ব্যাবহারের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কিছু অসুবিধাগুলিও দেখতে পাওয়া যায়।
· কনভেনশনাল মেশিনের তুলনায় CNC মেশিনের দাম সাধারনত অনেক বেশী হয়।
· CNC মেশিনে কম শ্রমিক লাগে বলে আন-এমপ্লয়মেন্ট তৈরি হয়।
· CNC মেশিন চালাতে কম দক্ষতার প্রয়োজন, ফলে দক্ষ শ্রমিকের অভাব তৈরি হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন