নিউম্যাটিক সিস্টেম কি?
CNC মেশিনে নিউম্যাটিক প্রেশার লাইন, নিউম্যাটিক কন্ট্রোল সিস্টেম এবং অ্যাকচুয়েটর ইত্যাদিকে একসাথে নিউম্যাটিক সিস্টেম বলা হয় এবং এই নিউম্যাটিক প্রেশারের সাহায্যে CNC মেশিনে বিভিন্ন রকমের কাজ করা হয়। আমরা
জানি যে কোনো গ্যাসিয়াস পদার্থকে যখন চাপ দিয়ে বা কম্প্রেস করে তার ভলিউম কমানো
হয়, তখন ঐ গ্যাসিয়াস পদার্থের মধ্যেকার
প্রেশারও বৃদ্ধি পায়, এবং এই বর্ধিত প্রেশারকে কাজে লাগিয়েই বিভিন্ন কাজ করানো
সম্ভব হয়। এখন এই গ্যাসিয়াস পদার্থ বা কম্প্রেসড এয়ারকে যদি একটি
রিজার্ভারে স্টোর করা যায়, তবে পরবর্তীকালেও ঐ কম্প্রেসড এয়ার প্রেশারকে কাজে
লাগানো সম্ভব হয়। CNC মেশিনের
সাথেই সাধারনত আলাদা ভাবে এয়ার কম্প্রেসার
নামক একটি ডিভাইস এই উদ্দেশ্যেই ব্যাবহার করা হয়। এয়ার
কম্প্রেসারের সাহায্যে এটোমসস্ফেয়ারের এয়ারকে কম্প্রেস করে একটি রিজার্ভারে স্টোর
করে রাখা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ঐ রিজার্ভার থেকে বিভিন্ন মেশিনে পাঠানো হয় এবং তারপর ঐ কম্প্রেসড এয়ারকে কাজে লাগিয়ে মেশিনের বিভিন্ন
কাজ করানো হয় ও কর্মসম্পাদনের পর ঐ কম্প্রেসড
এয়ারকে আবার এটোমসস্ফেয়ারেই রিলিজ করে দেওয়া হয়।
কখনো
দুই বা ততধিক CNC মেশিনের জন্য একটি মাত্র এয়ার কম্প্রেসার ইউনিট বা কখনো বা একটি CNC শপ, যেখানে প্রচুর সংখক CNC মেশিন রয়েছে, সেখানে আলাদা ভাবে একটি কম্প্রেসড এয়ার প্ল্যান্ট বসানো হয় এবং ঐ এয়ার প্ল্যান্ট থেকেই
মোটা পাইপের সাহায্যে কম্প্রেসড এয়ার প্রেশার বা নিউম্যাটিক প্রেশার প্রথমে CNC
শপে, এবং তারপর সেখান থেকে সরু পাইপের সাহায্যে বিভিন্ন মেশিনে পাঠানো হয়।
এয়ার
কম্প্রেসার থেকে নির্গত নিউম্যাটিক প্রেশারকে সাধারনত ৭ থেকে ৮
কেজির মধ্যে রাখা হয়। কিন্তু CNC মেশিনের
জন্য সাধারনত ৫.৫ থেকে ৬ কেজি নিউম্যাটিক প্রেশারের প্রয়োজন হয়, কারন বেশিরভাগ
নিউম্যাটিক সলিনয়েড ভাল্ব, অ্যাকচুয়েটার ইত্যাদি ঐ প্রেশারেই কাজ করে, তাই
নিউম্যাটিক প্রেশারকে কন্ট্রোল করার জন্য প্রতিটি CNC মেশিনেই
নিউম্যাটিক ইনকামিং লাইনের সাথে প্রেশার
রেগুলেটর ব্যাবহার করা হয়। CNC মেশিনে সাধারনত যে
সমস্ত ক্ষেত্রে কম পরিমান বাধা অতিক্রম করানোর
প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে নিউম্যাটিক প্রেশার ব্যাবহার করা হয়। নিউম্যাটিক
প্রেশার বিভিন্ন নিউম্যাটিক কন্ট্রোল ডিভাইস যেমন সলিনয়েড ভাল্ব ইত্যাদির মধ্যে
দিয়ে বিভিন্ন নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটার যেমন সিলিন্ডার ইত্যাদিতে পাঠানো হয়
প্রয়োজনীয় কর্মসম্পাদনের জন্য। পরবর্তিতে CNC মেশিনে ব্যাবহৃত বিভিন্ন
ধরনের নিউম্যাটিক কন্ট্রোল ডিভাইস এবং অ্যাকচুয়েটারের সম্মন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যে কোন
মেশিনেই নিউম্যাটিক প্রেশার ব্যাবহারের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা দুইই রয়েছে, এগুলি নিম্নরুপ।
নিউম্যাটিক
প্রেশার ব্যাবহারের সুবিধাগুলি হল –
·
এয়ার প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায়।
·
এয়ারকে সহজেই স্টোর করে রাখা যায়।
·
এয়ার প্রেশার লাইনকে অনেক দূর
পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া যায়।
·
খুব দ্রুত অপারেশান করানো যায়।
·
কোন রিটার্ন লাইনের প্রয়োজন নেই।
·
এক্সপ্লোশানের কোন ভয় নেই।
·
তৈরি করার খরচ খুবই সামান্য।
·
পরিস্কার এবং পলিউশান ফ্রি।
·
বিস্তৃত টেম্পারেচার রেঞ্জে সহজেই
কাজ করে থাকে।
নিউম্যাটিক
প্রেশার ব্যাবহারের অসুবিধাগুলি হল –
·
কম্প্রেসড এয়ার তৈরি করার সময় খেয়াল
রাখতে হয় যাতে এয়ারে ডার্ট এবং হিউমিডিটি না থাকে।
·
নিউম্যাটিক প্রেশারের সাহায্যে
সিলিন্ডারের পিস্টনের ইউনিফর্ম এবং কন্সট্যান্ট স্পীড পাওয়া যায় না।
·
নিউম্যাটিক প্রেশার কেবলমাত্র যেখানে
সামান্য ফোর্সের প্রয়োজন হয় সেখানেই ব্যাবহার করা যায়।
·
কম্প্রেসড এয়ারের এক্সস্ট সাউন্ডও খুবই বেশি হয়।
একটি সম্পুর্ন নিউম্যাটিক
সিস্টেমে কি কি কম্পোনেন্ট থাকে?
পরের
পাতায় একটি সম্পুর্ন নিউম্যাটিক সিস্টেমের ছবি
দেওয়া হল এবং ঐ সিস্টমে কি কি কম্পোনেন্ট ব্যাবহৃত হয় তা দেওয়া হল।
১। এয়ার
কম্প্রেসার ইউনিট
২। এয়ার সার্ভিস ইউনিট
৩। নিউম্যাটিক কন্ট্রোল এলিমেন্টস
৪। নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটরস
১। এয়ার
কম্প্রেসার ইউনিট
নিউম্যাটিক
সিস্টেমের কম্প্রেসারই হল
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কম্প্রেসারকে
সাধারনত একটি থ্রি-ফেজ ইন্ডাকশান মোটরের সাহায্যে চালানো হয়। কম্প্রেসারের সাথে লাগানো মোটরের ঘুর্ণনের ফলে কম্প্রেসার ইনটেক ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে বাইরের এটোমোসস্ফিয়ার থেকে বাতাসকে কম্প্রেসারের মধ্যে
টেনে নেয় এবং উচ্চ চাপে ঐ এয়ারের ভল্যুউমকে কমিয়ে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চাপে
রিজার্ভারের মধ্যে স্টোর করে রাখে। কম্প্রেসড
এয়ারের পাওয়ারই একমাত্র পাওয়ার যা কিনা এভাবে স্টোর করে রাখা
সম্ভব। এয়ার কম্প্রেসার সাধারনত
কন্টিনিউয়াস চলে না, রিজার্ভারের মধ্যে এয়ার প্রেশার একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়
পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই কম্প্রেসারকে বন্ধ
করে দেওয়া হয়। এবং এই ব্যাবস্থার জন্য নিউম্যাটিক প্রেশার সুইচ এবং
একটি কন্ট্রোল সিস্টেম কম্প্রেসারের
পাওয়ারের সাথেই লাগানো থাকে, যেটা কিনা ইন্ডাকশান মোটরকে চালু এবং বন্ধ হতে
সাহায্য করে। এরপর এই কম্প্রেসড
এয়ারকে রিজার্ভার থেকে পাইপের সাহায্যে মেশিনে পাঠানো হয়।
কম্প্রেসড
এয়ার প্রেশারের ভ্যালু, ডেলিভারি ভলিউম, স্টোরেজ করার
পরিমান, কম্প্রেসড এয়ারের কোয়ালিটি অর্থাৎ এতে
ময়েশ্চারের পরিমান ইত্যাদির উপর নির্ভর করেই একটি নিউম্যাটিক
সিস্টেমের এয়ার কম্প্রেসার নির্বাচন করা হয়। কম্প্রেসড এয়ার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের এয়ার কম্প্রেসার ব্যাবহার করা হয়। এগুলির মধ্যে রেসিপ্রোকেটিং
পিস্টন কম্প্রেসারই (Resiprocating Piston
Compressor) সবথেকে বেশি ব্যাবহৃত হয়। এছাড়াও কম্প্রেসড
এয়ার তৈরির জন্য স্লাইডিং ভেন রোটারি কম্প্রেসার বা টু-অ্যাক্সেল স্ক্র-কম্প্রেসার
ইত্যাদিও ব্যাবহার করা হয়। নিচে
একটি সম্পুর্ণ এয়ার কম্প্রেসার ইউনিটে কি কি থাকে তা
দেওয়া হল এবং একটি রেসিপ্রোকেটিং পিস্টন কম্প্রেসার কি ভাবে কাজ করে তা ছবিতে দেখানো হল।
একটি সম্পুর্ণ এয়ার কম্প্রেসার ইউনিটে সাধারনত নিম্নলিখিত কম্পোনেন্টগুলি থাকে
·
মোটর
এবং রেগুলেশান
·
এয়ার ফিল্টার
·
এয়ার কুলার
·
এয়ার ড্রায়ার
·
রিজার্ভার ট্যাঙ্ক
মোটর এবং রেগুলেশান
কম্প্রেসারকে চালানোর জন্য সাধারনত থ্রি-ফেজ ইন্ডাকশান মোটরই ব্যাবহার করা হয়।
কম্প্রেসারের ক্যাপাসিটির উপর নির্ভর করে এই
মোটরের ক্যাপাসিটি কত তা ঠিক
করা হয়। যে কোন নিউম্যাটিক সিস্টেমের কম্প্রেসড এয়ারের ব্যাবহার
অনিয়মিত (fluctuating consumption ) হয়, তাই কম্প্রেসারকে
অবশ্যই রেগুলেট করার অর্থাৎ চালু বা বন্ধ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই উদ্দেশ্যে নিউম্যাটিক কম্প্রেসারে বিভিন্ন ধরনের রেগুলেশান সিস্টেম
ব্যাবহার করা হয়। এগুলির মধ্যে এক্সস্ট রেগুলেশান
(exhaust regulation), শাট-অফ রেগুলেশান (Shut off
regulation) এবং অন-অফ রেগুলেশান (on-off regulation) বেশি
ব্যাবহৃত হয়।
এক্সজস্ট রেগুলেশান - এটি
সবচেয়ে সহজ ধরেনের রেগুলেশান সিস্টেম, এখানে কম্প্রেসার একটি প্রেশার রিলিফ ভাল্বের বিপরিতে কাজ করে। যখন এয়ার রিসিভারে নির্দিষ্ট প্রেশার তৈরি হয়ে যায়, তখন ঐ প্রেশার রিলিফ
ভাল্ব খুলে যায় এবং প্রেশারাইজড এয়ার বাইরের এটোমসস্ফিয়ারে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও একটি চেক ভাল্ব রিসিভারকে সম্পুর্ণ খালি হওয়া থাকে রক্ষা করে।
শাট
অফ রেগুলেশান– এই ধরনের রেগুলেশান
সিস্টেমে কম্প্রেসারের সাকশানের দিককে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে কম্প্রেসার বাইরে থেকে আর কোন এয়ার টানতে পারে না, ফলে কম্প্রেসারটি ভ্যাকুয়ামে চলতে থাকে এবং তার ফলে কোন প্রেশারও ডেভালাপ করে না।
অন-অফ
রেগুলেশান - এই ধরনের রেগুলেশান সিস্টেমে কম্প্রেসার ইউনিটকে একটি কন্ট্রোলিং ইউনিটের সাহায্যে বন্ধ করা হয় এবং পুনরায় চালু
করা হয়। কম্প্রেসারের এই চালু এবং বন্ধর সময় নির্ভর করে কম্প্রেসারের রিজার্ভার ট্যাঙ্ক থেকে কি
পরিমান কম্প্রেসড এয়ার খরচ বা ব্যাবহার করা
হচ্ছে তার উপর। রিজার্ভার ট্যাঙ্কের
সঙ্গেই একটি প্রেশার সুইচ লাগানো থাকে, যা কিনা কম্প্রেসারের মধ্যের এয়ার প্রেশার একটি
নির্দিষ্ট মাত্রায় আছে কিনা তা সুনিশ্চিত করে। রিজার্ভারের মধ্যের প্রেশারের দুইটি আলাদা মাত্রা থাকে একটি Pmin এবং অপরটি Pmax। রিজার্ভারের মধ্যের প্রেশারের মান Pmin থেকে নিচে নেমে গেলে প্রেশার সুইচের ইনপুট সিগনাল একটি
কন্ট্রোল সার্কিটকে অন করে, যা কিনা কম্প্রেসারের সাথে লাগানো মোটরটিকেও চালু করে দেয় এবং মোটরটি ততক্ষণই
চালু থাকে যতক্ষণ না রিজার্ভারের মধ্যে Pmax প্রেশার তৈরি হচ্ছে। প্রেশার সুইচের অ্যাক্টিভেটিং ও ডি-অ্যাক্টিভেটিং (activating and
de-activating) প্রেশার অ্যাডজাস্ট করে রিজার্ভারের মধ্যে মিনিমাম ও ম্যাক্সিমাম প্রেশার
কত থাকবে তা ঠিক করা হয়। সাধারনত রিজার্ভারের মধ্যের ঐ প্রেশার ৭ থেকে ৮ কেজির মত রাখা থাকে।
এয়ার
ফিল্টার
কম্প্রেসার এই ফিল্টারের মধ্যে দিয়েই এটোমোসস্ফিয়ার থেকে এয়ারকে টেনে নেয়। বাতাসে মিশ্রিত ধূলিকণা যাতে কম্প্রেসারের মধ্যে
না ঢুকতে পারে, তাই কম্প্রেসারের ইনটেক
লাইনের সাথে এই ফিল্টার লাগানো হয়।
এয়ার
কুলার
এয়ার কম্প্রেসারের সাহায্যে যখন এয়ারের ভল্যুউমকে
কম করা হতে থাকে তখন সাথে সাথে তার টেম্পারেচারও বাড়তে শুরু করে। এই গরম কম্প্রেসড এয়ার যদি মেশিনের নিউম্যাটিক সার্কিটে পাঠানো হয়, তবে তা
বিভিন্ন নিউম্যাটিক কম্পোনেন্টকেও খুব তাড়াতাড়ি খারাপ করে দেয় এবং কম্পোনেন্টগুলির
পারফর্মেন্সও সাথে সাথে কমে যায়। এই কারনেই এয়ার কম্প্রেসার ইউনিটের সাথে অবশ্যই একটি কুলিং ডিভাইস লাগানো হয়, যা কিনা কম্প্রেসড
এয়ারকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। ছোট কম্প্রেসারের জন্য সাধারনত কুলিং ফ্যানই ব্যাবহার করা হয়, কিন্তু বড় কম্প্রেসারের জন্য আলাদা চিলার ইউনিট (Chiller Unit) ব্যাবহৃত হয়।
এয়ার
ড্রায়ার
ময়েশ্চার
যুক্ত এয়ার যে কোন CNC মেশিনেরই মেশিনে ব্যাবহৃত নিউমেটিক
ডিভাইসগুলির পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক, কারন ময়েশ্চার যুক্ত এয়ারের ফলে করোশান (corrosion) তৈরি হয়, এবং এটি
নিউমেটিক ডিভাইসগুলির বিভিন্ন সিলকেও (seals) শক্ত করে দেয়। এছাড়া ময়েশ্চার অন্যান্য নিউমেটিক
ডিভাইসগুলির মধ্যেকার নিজস্ব লুব্রিকেশানকেও নষ্ট করে ফেলে। তাই
কম্প্রেসড এয়ার সিস্টেমের কম্প্রেসড এয়ার থেকে ময়েশ্চারকে দূর করার জন্য এয়ার ড্রায়ার
ব্যাবহার করা হয়।
রিজার্ভার
ট্যাঙ্ক
এয়ার কম্প্রেসার থেকে নির্গত কম্প্রেসড এয়ারকে রিজার্ভার ট্যাঙ্কে স্টোর করে রাখা হয়। এরপর ঐ রিজার্ভার থেকেই একটি পাইপলাইনের সাহায্যে মেশিনে নিউমেটিক প্রেশার পাঠানো হয়। সাধারনত ছোট এয়ার কম্প্রেসারে রিজার্ভার ট্যাঙ্কের উপরেই অন্যান্য ডিভাইসগুলি যেমন মোটর, কম্প্রেসার, কুলার, ফিল্টার ইত্যাদি বসানো থাকে। কিন্তু বড় বড় এয়ার কম্প্রেসার ইউনিটের ক্ষেত্রে যেখানে একটিমাত্র এয়ার কম্প্রেসার অনেকগুলি CNC মেশিনের জন্য ব্যাবহার করা হয়, সেক্ষেত্রে রিজার্ভার ট্যাঙ্ককে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেমের বাকি সব ডিভাইসগুলি থেকে দূরে আলাদাভাবে বসানো থাকে এবং একে এয়ার রিসিভার ইউনিট বলা হয়। এয়ার কম্প্রেসার থেকে নির্গত কম্প্রেসড এয়ার মোটা পাইপের সাহায্যে এই রিসিভার ইউনিটে পাঠানো হয় এবং ঐ এয়ার রিসিভার ইউনিট থেকেই কম্প্রেসড এয়ার বিভিন্ন মেশিনে পাঠানো হয়। নিচে একটি রিজার্ভার ট্যাঙ্ক এবং তার বিভিন্ন অ্যাক্সেসরিজ দেখানো হল।
২। এয়ার সার্ভিস ইউনিট
পরিস্কার এবং ময়েসচার ফ্রি এয়ার প্রেশারের জন্য এয়ার সার্ভিস ইউনিট
নিউম্যাটিক প্রেশার লাইনের সাথেই কাজ করে থাকে, এবং এটি সাধারনত তিনটি আলাদা
ইউনিটকে একত্রে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়। এগুলি হয় যথাক্রমে এয়ার ফিল্টার, এয়ার
রেগুলেটার এবং এয়ার লুব্রিকেটার। নিচের ছবিতে একটি এয়ার সার্ভিস ইউনিট অথবা FRL
(Filter, Regulator & Lubricator) ইউনিটের ছবি দেওয়া হল, যা কিনা শুধুমাত্র
CNC মেশিন নয়, অন্যান্য নিউম্যাটিক অপারেটেড মেশিনের ক্ষেত্রেও পরিস্কার এবং ময়েসচার
ফ্রি এয়ার প্রেশারের জন্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
এয়ার ফিল্টার
এটি কম্প্রেসেড এয়ার থেকে বিভিন্ন কন্টামিনেশান যেমন ডার্ট, ময়েসচার
ইত্যাদি আলাদা করে দেয়। কম্প্রেসেড এয়ার এর মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় সেন্ট্রিফিউগাল
ফোর্সের দ্বারা জল এবং ডার্ট কম্প্রেসড এয়ার থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং পাত্রের নিচে
জমা হয়, এবং পাত্রের নিচে অবস্থিত ড্রেইন কক রিলিজ সিস্টেমের সাহায্যে ওই
মিক্সচারকে বাইরে বের করে দেওয়া হয়।
এয়ার রেগুলেটার
এয়ার ফিল্টারের পর ক্লিন এয়ার রেগুলেটারের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয়, এবং এখানে
একটি রোটেটিং নবের সাহায্যে আউটগোইং এয়ার প্রেশার ঠিক করা হয়, যা কিনা ইনকামিং
প্রেশারের সামান্য তারতম্যেও আউটগোইং প্রেশার মোটামুটি ঠিক থাকে।
এয়ার
লুব্রিকেটর
কম্প্রেসড
এয়ার লাইনকে রেগুলেটার ইউনিটের পর এয়ার লুব্রিকেটরের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়, যেখানে খুব
সামান্য এবং নির্দিষ্ট পরিমানে লুব্রিকেটিং তেল এয়ার লাইনের সাথে মিশ্রিত করা হয়, এবং
এর পর ওই কম্প্রেসড এয়ারকে বিভিন্ন নিউম্যাটিক কম্পোনেন্টে পাঠানো হয়ে থাকে, এবং এর
ফলে নিউম্যাটিক কম্পোনেন্টগুলি করোশানের হাত থেকে রক্ষা পায়।
৩। নিউমেটিক কন্ট্রোল এলিমেন্টস
CNC মেশিনের প্রয়োজন অনুসারে একটি
নিউমেটিক সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের কন্ট্রোল
এলিমেন্টস বা নিউম্যাটিক ভাল্ব ব্যাবহার করা
হয়। এই নিউম্যাটিক
ভাল্ব বা এলিমেন্টসগুলির মূল কাজই হল নিউমেটিক প্রেশার লাইনকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন নিউমেটিক অ্যাক্টিভেটরসকে
চালনা করা। নিচে এদের
সম্মন্ধে বিশদভাবে আলোচনা করা হল।
নিউম্যাটিক
ভাল্ব কি?
নিউম্যাটিক
ভাল্ব সাধারনত কোন এয়ার প্রেশার লাইনের বা নিউম্যাটিক প্রেশার লাইনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন অ্যাকচুয়েটরকে কন্ট্রোল করার জন্য এবং
বিভিন্ন সিকোয়েন্সিয়াল অপারেশান করানোর জন্য ব্যাবহৃত হয়। এছাড়াও নিউম্যাটিক লাইনের মধ্যের বিভিন্ন ইন্টারলক
ও সেফটি ডিভাইস হিসাবেও এগুলি ব্যাবহৃত হয়। কাজের ধরন অনুযায়ী নিউম্যাটিক
ভাল্বকে প্রধানত চারটি আলাদা গ্রুপে ভাগ করা হয়, এগুলি হল
নিম্নরূপ।
·
ডাইরেকশন কন্ট্রোল ভাল্ব
·
নন রিটার্ন ভাল্ব
· শাটল ভাল্ব
·
ফ্লো কন্ট্রোল ভাল্ব
·
প্রেশার কন্ট্রোল ভাল্ব
ডাইরেকশন কন্ট্রোল ভাল্ব
হাইড্রোলিক সিস্টেমের মতই নিউম্যাটিক ডাইরেকশন কন্ট্রোল ভাল্বের সাহায্যেও ফ্লুইড ফ্লো কে (এক্ষেত্রে এয়ার প্রেশার) প্রয়োজন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট দিকে চালনা করা হয়, অর্থাৎ নিউম্যাটিক প্রেশার ফ্লো এর ডাইরেকশনকে কন্ট্রোল করা হয়। নিউম্যাটিক ডাইরেকশন কন্ট্রোল ভাল্বও গঠন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন পোপেট বা সিট ভাল্ব এবং স্লাইডিং স্পুল ভাল্ব। আবার ভাল্বের নাম্বার অফ পোর্টের হিসাবেও ডাইরেকশন কন্ট্রোল ভাল্ব বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন টু-ওয়ে ভাল্ব, থ্রি-ওয়ে ভাল্ব এবং ফোর-ওয়ে ভাল্ব ইত্যাদি। এছাড়াও ভাল্বকে পরিচালন করার পদ্ধতি অর্থাৎ মেথড অফ অ্যাকচুয়েশান অনুযায়ী মেকানিক্যাল ও ইলেক্ট্রিক্যাল এই দুই ধরনের হয়। হাইড্রোলিক ডাইরেকশন কন্ট্রোল ভাল্বের সাথে নিউম্যাটিক ডাইরেকশন কন্ট্রোল ভাল্বের মূল পার্থক্য হল এই ধরনের ভাল্বের কোন ট্যাঙ্ক লাইন থাকে না এক্ষেত্রে নিউম্যাটিক প্রেশারের রিটার্ন লাইনকে সরাসরি বাইরের অ্যাটোমস্ফিয়ারে একজস্ট বা রিলিজ করা হয়। নিচে CNC মেশিনে বহুল ব্যাবহৃত ইলেক্ট্রিক্যালি অ্যাকচুয়েটেড 5/2 স্লাইডিং স্পুল ভাল্বের ছবি ও তার ভিতরের অংশ দেখানো হল।
নন রিটার্ন ভাল্ব
নন রিটার্ন ভাল্ব নিউম্যাটিক প্রেশার
লাইনের এয়ারকে কেবলমাত্র একই দিকে চালনা করার জন্য ব্যাবহৃত হয় এবং যদি বিপরিত দিক
থেকে কোন এয়ার প্রেশার ঐ লাইনে চলে আসে, তবে নন রিটার্ন ভাল্ব ঐ এয়ার প্রেশারকে
আসতে বাধা দেয়। নন রিটার্ন ভাল্ব কর্মপদ্ধতি ও প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন
ধরনের হয়, এগুলি হল চেক ভাল্ব, শাটল ভাল্ব, কুইক এক্সজস্ট ভাল্ব ইত্যাদি। উপরোক্ত নন রিটার্ন ভাল্বগুলির মধ্যে চেক ভাল্বই CNC মেশিনের নিউম্যাটিক সার্কিটে সবথেকে বেশী ব্যাবহৃত হয়। চেক ভাল্ব লাইনের একদিকের নিউম্যাটিক প্রেশারকে সম্পুর্ন ভাবে বন্ধ করে রাখে, কিন্তু অপর দিক থেকে সামান্য
প্রেশারেই এটি খুলে যায়। নিউম্যাটিক চেক ভাল্বও গঠন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন প্লাগ, বল, প্লেট,
ডায়াফ্রাম ইত্যাদি। নিচের ছবিতে CNC মেশিনে বহুল ব্যাবহৃত একটি সাধারন বল
টাইপ নিউম্যাটিক চেক ভাল্বের ভিতরের গঠন দেখানো
হল।
শাটল ভাল্ব
এটি একটি থ্রি-পোর্ট ভাল্ব, যেখানে দুটি ইনকামিং পোর্ট ও একটি আউটগোইং
পোর্ট রয়েছে। শাটল ভাল্বের সাহায্যে যে কোন একটিমাত্র ইনকামিং পোর্টের এয়ার প্রেশারকেই
আউটগোইং পোর্টে পাঠানো হয়, এবং যখন দুটি পোর্টেই এয়ার প্রেশার বর্তমান, সেক্ষেত্রে
কেবলমাত্র হায়ার বা উচ্চ চাপের পোর্টের এয়ার প্রেশারই আউটগোইং পোর্টে পৌঁছাবে। পরবর্তি
ছবিতে Input-1 এর প্রেশার Input-2 এর থেকে বেশী হওয়ার জন্য আউটপুট প্রেশার,
Input-1 প্রেশারের সমতুল হবে।
ফ্লো কন্ট্রোল ভাল্ব
ফ্লো কন্ট্রোল ভাল্বের সাহায্যে নিউম্যাটিক প্রেশার লাইনের মধ্যের এয়ারের ফ্লো কে প্রয়োজন অনুযায়ী কম
বা বেশী অর্থাৎ রেগুলেট করা হয়। গঠন অনুযায়ী ফ্লো কন্ট্রোল ভাল্ব সাধারনত দুই ধরনের হয়, ভেরিয়েবল
রেস্ট্রিকটর টাইপ বা ম্যানিফোল্ড টাইপ এবং ভেরিয়েবল রেস্ট্রিকশান টাইপ বা ইনলাইন
টাইপ । নিচে একটি ইনলাইন টাইপ সরল নিউম্যাটিক ফ্লো কন্ট্রোল ভাল্ব কিভাবে কাজ করে তা দেখানো হল। এক্ষেত্রে
ভাল্বের মধ্যের একটি পপেটকে কন্ট্রোল নবের সাহায্যে ঘুরিয়ে এয়ার ফ্লো কে কম বা
বেশী করা হয়।
প্রেশার কন্ট্রোল ভাল্ব
হাইড্রোলিক সিস্টেমের মতই কখনো কখনো নিউম্যাটিক সিস্টেমের প্রেশারকেও কন্ট্রোল করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। নিউম্যাটিক প্রেশার কন্ট্রোল ভাল্বের সাহায্যে এই নিউম্যাটিক লাইনের প্রেশারকে বিভিন্ন ভাবে কন্ট্রোল করা হয়। কাজের ধরন অনুযায়ী প্রেশার কন্ট্রোল ভাল্ব সাধারনত তিন ধরনের হয়, এগুলি
নিম্নরূপ।
·
প্রেশার লিমিটিং ভাল্ব
·
প্রেশার সিকোয়েন্স ভাল্ব
·
প্রেশার রেগুলেটর বা প্রেশার
রিডিউসিং ভাল্ব
প্রেশার
লিমিটিং ভাল্ব - প্রেশার
লিমিটিং ভাল্বের সাহায্যে কোন নিউম্যাটিক
সিস্টেমের প্রেশারকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বেঁধে রাখা হয়, অর্থাৎ প্রেশার
লিমিটিং ভাল্ব নিউম্যাটিক
সিস্টেমের প্রেশারকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কখনোই বেশী হতে দেয় না। এই
ধরনের ভাল্ব সাধারনত কম্প্রেসড এয়ার জেনারেশন প্ল্যান্টে কম্প্রেসরের সাথেই
ব্যাবহৃত হয়। এই ধরনের ভাল্বে একটি অটোমেটিক
সেফটি রিলিফ ফাংশান থাকে, যা কিনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে
খুলে গিয়ে নিউম্যাটিক সিস্টেমের অতিরিক্ত প্রেশারকে আটোমস্ফিয়ারে
রিলিজ করে। যখন ঐ অতিরিক্ত এয়ার প্রেশার
আটোমস্ফিয়ারে রিলিজ হয়ে যায়, তখন ভাল্বটি স্প্রিং টেনশানের ফলে
পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়।
প্রেশার
সিকোয়েন্স ভাল্ব - প্রেশার
সিকোয়েন্স ভাল্বের কর্মপদ্ধতি অনেকটা প্রেশার লিমিটিং ভাল্বের মতই, কিন্ত এই ধরনের
ভাল্ব নিউম্যাটিক লাইনে ভিন্ন
উদ্দেশ্যে ব্যাবহৃত হয়ে। এই ধরনের ভাল্বের আউটপুট প্রেশার
ততক্ষন বন্ধ থাকে, যতক্ষণ না ভাল্বের ইনকামিং প্রেশার একটি নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে
বেশী হয়। অর্থাৎ প্রেশার সিকোয়েন্স ভাল্বের ইনকামিং প্রেশার একটি
পূর্বনির্ধারিত নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে বেশী হলেই কেবলমাত্র ভাল্বের আউটপুট লাইন খুলে যায়, এবং আউটপু্ট লাইনে এয়ার প্রেশার পাওয়া যায়। তাই
যে সকল ক্ষেত্রে কোন নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটারকে
কেবলমাত্র একটি সঠিক এবং নির্দিষ্ট এয়ার প্রেশারেই কাজ করানোর প্রয়োজন হয়, সেখানে
এই প্রেশার সিকোয়েন্স ভাল্ব ব্যাবহৃত হয়, এবং ঐ নির্দিষ্ট প্রেশারের থেকে ইনকামিং
লাইনে কম প্রেশার থাকলে নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটারটি কাজ বন্ধ করে দেয়।
প্রেশার
রেগুলেটর বা প্রেশার রিডিউসিং ভাল্ব - প্রেশার
রেগুলেটর বা প্রেশার রিডিউসিং ভাল্বের সাহায্যে কোন নিউম্যাটিক লাইনের আউটপুটে সবসময় একটি নির্দিষ্ট এয়ার প্রেশার পাওয়া যায়। এবং আউটপুট লাইনের এই প্রেশার ইনকামিং এয়ারের সামান্য পরিবর্তন অর্থাৎ
ফ্লাকচুয়েশানের (Fluctuation) বা আউটপুটের এয়ার ফ্লোএর উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ কোন নিউম্যাটিক সিস্টেমে সবসময় একটি নির্দিষ্ট
এয়ার প্রেশার পাওয়ার জন্য এই ধরনের ভাল্বের ব্যাবহার হয়ে থাকে। এই ধরনের ভাল্বগুলির মধ্যে সাধারনত ইন্টিগ্রাল লোডিং, সেন্সিং,
অ্যাকচুয়েটিং এবং কন্ট্রোল এই কম্পোনেন্টগুলি থাকে, যাদের সাহায্যে ভাল্বের আউটপুট
প্রেশারকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পাওয়া যায়। প্রেশার
রেগুলেটর ভাল্ব সাধারনত তিন ধরনের হয়, এগুলি হল জেনারেল পারপাস,
স্পেশাল পারপাস এবং প্রেসিশান ভাল্ব। এদের মধ্যে জেনারেল পারপাস
প্রেশার রেগুলেটর ভাল্বই CNC মেশিনে বেশী ব্যাবহৃত হয়। স্পেশাল পারপাস এবং প্রেসিশান ভাল্ব সাধারনত যেখানে খুবই অ্যাক্যুরেট
প্রেশার কন্ট্রোলের প্রয়োজন হয়, সেখানে ব্যাবহার করা হয়।
৪। নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটার কি?
নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটার বলতে বোঝায় এমন একটি ডিভাইস যা কিনা প্রেসারাইজড বা কম্প্রেসড এয়ারের এনার্জিকে মেকানিক্যাল এনার্জিতে পরিবর্তন করে। কোনো গ্যাসিয়াস পদার্থকে যখন চাপ দিয়ে বা কম্প্রেস করে তার ভলিউম কমানো হয়, তখন ঐ গ্যাসিয়াস পদার্থের মধ্যেকার প্রেশারও বৃদ্ধি পায়, এবং এই বর্ধিত প্রেশারকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন কাজ করানো সম্ভব হয়। আবার এই কম্প্রেসড এয়ারকে যদি একটি রিজার্ভারে স্টোর করা যায়, তবে পরবর্তীকালেও ঐ কম্প্রেসড এয়ার প্রেশারকে কাজে লাগানো সম্ভব হয়। নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটার কম্প্রেসড এয়ারের সাহায্যে মেকাট্রনিক্স সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে, যেমন মেশিনের অটোমেটিক ডোর ওপেন ক্লোজ, কাটিং টুলের চেঞ্জিং আর্ম মুভমেন্ট ইত্যাদি। যেহেতু নিউম্যাটিক প্রেশার সাধারনত ৫ থেকে ৭ কেজির মধ্যে থাকে, তাই বেশীরভাগ ক্ষাত্রেই কম পরিমান লোড বা বাধা অতিক্রম করার জন্য কেবলমাত্র নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটার ব্যাবহার করা যায়, নতুবা হেভি লোডের জন্য নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটারের পিস্টনের ডায়ামিটার বড় করার প্রয়োজন হয়। নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটারও হাইড্রোলিক অ্যাকচুয়েটারের মত লিনিয়ার এবং রোটারি এই দুই প্রকারের হয়ে থাকে।
নিউম্যাটিক
লিনিয়ার অ্যাকচুয়েটার
নিউম্যাটিক লিনিয়ার অ্যাকচুয়েটার বলতে সাধারনত বিভিন্ন ধরনের নিউম্যাটিক সিলিন্ডারকেই বোঝায়। গঠন এবং সিলিন্ডারটির কাজের ধরন অনুযায়ী নিউম্যাটিক সিলিন্ডারও বিভিন্ন প্রকারের হয়। কম্প্রেসড এয়ারের এনার্জি যেহেতু হাইড্রোলিক এনার্জির তুলনায় অনেক কম হয়, তাই নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের সাহায্যে হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের তুলনায় অনেক কম পরিমানের মেকানিক্যাল এনার্জি পাওয়া যায়, এই কারনে নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের গঠনও হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের তুলনায় হাল্কা হয়। একই পরিমান কাজ হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের বদলে নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের সাহায্যে করতে হলে ঐ নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের ব্যারেলের ডায়ামিটারও অনেক বেশী করার প্রয়োজন হয়। যে কোন মেকাট্রনিক্স সিস্টেমেই নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের ব্যাবহার সবসময়ই হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের তুলনায় অনেক সহজ কিন্তু যে সকল ক্ষেত্রে কোন ডিভাইসে ‘স্টেডি ফোর্স’ দেওয়ার প্রয়োজন বা যেখানে ‘ফ্লাকচুয়েটিং লোড’ থাকে, সেইসকল ক্ষেত্রে সবসময় হাইড্রোলিক সিলিন্ডারই ব্যাবহৃত হয়।
নিউম্যাটিক
সিলিন্ডারের রেসপন্স টাইম খুবই দ্রুত হয়, তাই এই ধরনের সিলিন্ডার
ব্যাবহারের যেমন কিছু সুবিধা আছে, সেরকম একটি অসুবিধাও রয়েছে, সেটি হল সিলিন্ডারটি
স্ট্রোক কমপ্লিট করার সময় পিস্টনটি সিলিন্ডারের এন্ড কভারের উপর জোরে ধাক্কা দেয়, ফলে সিলিন্ডারটির সহজেই ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে। এই অসুবিধা দূর করার জন্য প্রায় সব ধরনের নিউম্যাটিক
সিলিন্ডারেই কুশনিং ব্যাবস্থা থাকে, এটি এমন একটি ব্যাবস্থা যা
কিনা সিলিন্ডারের পিস্টনের মুভমেন্ট যখন একদম শেষের দিকে পৌছায়, তখন তাকে স্লো করে
দেয়। নিউম্যাটিক সিলিন্ডারে
সাধারনত দুই ধরনের কুশনিং ব্যাবস্থা থাকে, এগুলি হল ফিক্সড এবং অ্যাডজাস্টেবল
কুশনিং। ফিক্সড কুশনিং সাধারনত কম বোরের নিউম্যাটিক
সিলিন্ডারে ব্যাবহৃত হয়, এবং যেখানে সিলিন্ডারের পিস্টনের স্পিড খুব বেশী থাকে, সেই সব সিলিন্ডারে অ্যাডজাস্টেবল কুশনিং ব্যাবস্থা থাকে। বিভিন্ন ধরনের নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের
মধ্যে নিম্নলিখিত তিন ধরনের সিলিন্ডারই মেকাট্রনিক্স সিস্টেমে সবচেয়ে বেশী দেখতে পাওয়া যায়।
·
সিংগল অ্যাকটিং
নিউম্যাটিক সিলিন্ডার
·
ডাবল অ্যাকটিং
নিউম্যাটিক সিলিন্ডার
·
রডলেস নিউম্যাটিক সিলিন্ডার
সিংগল অ্যাকটিং নিউম্যাটিক সিলিন্ডার - হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের মতই এই ধরনের সিংগল অ্যাকটিং নিউম্যাটিক সিলিন্ডারের কর্মপদ্ধতিও প্রায় একই রকম হয়। এখানেও একটি পিষ্টনকে সিলিন্ড্রিক্যাল হাউজিং এর ভিতরেই ঢোকানো থাকে, এবং ঐ পিষ্টনের সাথেই একটি রড যুক্ত থাকে, যাতে কিনা পিষ্টনের মুভমেন্টের সাথে সাথেই সেটি আগেপিছে করে। পিষ্টনের মুভমেন্ট এখানে এয়ার প্রেশারের সাহায্যে করা হয়, এবং পিষ্টনের রিটার্ন মুভমেন্ট স্প্রিং এর সাহায্যে হয়। এই ধরনের সিলিন্ডারে সাধারনত ফিক্সড অথবা অ্যাডজাস্টেবল কুশনিং ব্যাবস্থা থাকে। হাইড্রোলিক সিলিন্ডারের মতই এক্ষেত্রেও সিংগল অ্যাকটিং সিলিন্ডার দুই প্রকারের হতে পারে, পুশ টাইপ এবং পুল টাইপ। নিচে একটি পুশ টাইপ সিংগল অ্যাকটিং সিলিন্ডারের ছবি দেওয়া হল।
ডাবল অ্যাকটিং নিউম্যাটিক সিলিন্ডার - এই ধরনের সিলিন্ডারও হাইড্রোলিক ডাবল অ্যাকটিং সিলিন্ডারের মতই কাজ করে। নিউম্যাটিক ডাবল অ্যাকটিং সিলিন্ডারও দুই ধরনের হতে পারে, পিষ্টন রড ইন ওয়ান সাইড এবং পিষ্টন রড ইন বোথ সাইড। অর্থাৎ সিলিন্ডারের পিষ্টন রড সিলিন্ডারের একদিকে বা উভয়দিকেই থাকতে পারে এবং এই ধরনের সিলিন্ডারেও কুশনিং ব্যাবস্থা থাকে। নিচে দুই ধরনের ডাবল অ্যাকটিং সিলিন্ডারের ছবি দেওয়া হল।
রডলেস নিউম্যাটিক সিলিন্ডার - এই ধরনের নিউম্যাটিক সিলিন্ডার বেসিক সিলিন্ডারের থেকে ভিন্ন হয়, কারন এই ধরনের সিলিন্ডারে পিস্টনের সাথে কোন পিস্টন রড যুক্ত থাকে না। এখানে সিলিন্ডারের ভিতরের পিস্টনটিকে বাইরের লোড ক্যারিং কার্টিজের সাথে ম্যাগনেটিক বা মেকানিক্যাল কাপলিং দিয়ে যুক্ত করা হয়। রডলেস নিউম্যাটিক সিলিন্ডার সাধারনত তিন ধরনের হয়, এগুলি হল কেবল সিলিন্ডার, সিলিং ব্যান্ড সিলিন্ডার উইথ স্লটেড সিলিন্ডার ব্যারেল এবং ম্যাগনেটিক্যালি কাপলড স্লাইড সিলিন্ডার। এই তিন ধরনের রডলেস সিলিন্ডারের মধ্যে মেকাট্রনিক্স সিস্টেমে সিলিং ব্যান্ড সিলিন্ডার উইথ স্লটেড সিলিন্ডার ব্যারেল এবং ম্যাগনেটিক্যালি কাপলড স্লাইড সিলিন্ডার গুলিই বেশী ব্যাবহৃত হয়। নিচে একটি ম্যাগনেটিক্যালি কাপলড রডলেস সিলিন্ডারের ছবি দেওয়া হল।
নিউম্যাটিক
রোটারি অ্যাকচুয়েটার
নিউম্যাটিক
রোটারি অ্যাকচুয়েটারে নিউম্যাটিক এনার্জি বা
এয়ার প্রেশারের সাহায্যে রোটারি মুভমেন্ট পাওয়া যায়। নিউম্যাটিক
রোটারি অ্যাকচুয়েটার দুই ধরনের হতে পারে প্রথমটি
যার সাহায্যে কন্টিনিউয়াস রোটারি মুভমেন্ট পাওয়া যায় এবং দ্বিতীয়টি যার সাহায্যে
লিমিটেড রোটারি মুভমেন্ট পাওয়া যায়। কন্টিনিউয়াস রোটারি মুভমেন্ট
নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটারকে নিউম্যাটিক মোটরও বলা হয়। গঠন এবং কাজের ধরন অনুযায়ী
নিউম্যাটিক মোটরও তিন প্রকারের হয়, এগুলি
হল পিস্টন মোটর, স্লাইডিং ভেন মোটর এবং গিয়ার মোটর। নিচে একটি স্লাইডিং
ভেন টাইপ নিউম্যাটিক মোটরের ছবি দেওয়া হল।
লিমিটেড রোটারি মুভমেন্ট নিউম্যাটিক অ্যাকচুয়েটারের সাহায্যে সাধারনত হাই টর্ক আউটপুট পাওয়া যায় এবং এগুলির স্ট্যান্ডার্ড রোটেশান সাধারনত 90°, 180º এবং 270° হয়। আবার লিমিটেড রোটারি মুভমেন্ট রোটারি অ্যাকচুয়েটারও তিন প্রকারের হয়ে থাকে, এগুলি হল ভেন টাইপ, র্যাক অ্যান্ড পিনিয়ন টাইপ এবং হেলিক্স স্পাইন টাইপ নিউম্যাটিক রোটারি অ্যাকচুয়েটার। নিচে একটি র্যাক অ্যান্ড পিনিয়ন টাইপ লিমিটেড মুভমেন্ট রোটারি অ্যাকচুয়েটারের ছবি দেওয়া হল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন