PLC প্রোগ্রাম বলতে কি বোঝায়
পূর্বেই আলোচনা
করা হয়েছে PLCকে ‘RUN’ করানোর জন্য
একটি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রয়োজন হয় যা কিনা সাধারনত বাইরের কম্পিউটারে লিখে PLCতে
পাঠানো হয় এবং এই প্রোগ্রাম PLC
ইউজার বা PLC যে মেশিনে ব্যাবহার করা হবে, সেই মেশিন ম্যানুফ্যাকচারাররা
লিখে থাকেন। এই প্রোগ্রাম বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজে বা ভাষায় লেখা যায়, তবে এগুলির মধ্যে সবথেকে প্রচলিত
ল্যাংগুয়েজগুলি হল ল্যাডার লজিক বা ‘LAD’, স্টেটমেন্ট লিস্ট বা ‘STL’ এবং ফাংশান ব্লক ডায়াগ্রাম বা ‘FBD’। তাই এখানে শুধুমাত্র এই তিনটি ল্যাংগুয়েজ সম্পর্কেই আলোচনা করা হয়েছে। আবার এই তিনটি ল্যাংগুয়েজের মধ্যে ল্যাডার লজিক ল্যাংগুয়েজ বা LADDER ডায়াগ্রামে প্রোগ্রাম লেখা এবং
বোঝা সবথেকে সুবিধজনক, তাই বেশীরভাগ PLC ম্যানুফ্যাকচারাররা এই LADDER
ল্যাংগুয়েজকেই বেশী ব্যাবহার করে থাকেন। এই
অধ্যায়ে তিনটি ল্যাংগুয়েজ সম্মন্ধে আলাদা ভাবে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে এবং
পরবর্তীতে শুধুমাত্র LADDER ল্যাংগুয়েজের সাহায্যে কিভাবে PLC প্রোগ্রাম লেখা যায়,
তা উদাহরনের সাহায্যে বোঝানো হয়েছে। নিচে একটি ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের সমতুল LAD, FBD এবং STL এ লেখা প্রোগ্রামগুলি
দেখানো হল।

উপরে উল্লিখিত ল্যাডার লজিক, স্টেটমেন্ট লিস্ট এবং ফাংশান ব্লক ডায়াগ্রামের সাহায্যে PLC প্রোগ্রাম লেখার ধরন সম্পর্কে ভালোভাবে বা সঠিকভাবে বুঝতে হলে প্রথমে লজিক্যাল ফাংশান বা
অপারেশান (Logical Function or Operation) সম্মন্ধে সম্যক ধারনা থাকা প্রয়োজন। পরের অধ্যায়ে বিভিন্ন Logical
Operation এবং সেগুলির ব্যাবহার সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। নিচে তিনটি ল্যাংগুয়েজ সম্মন্ধে আলাদা ভাবে আলোচনা করা হল।
ল্যাডার লজিক বা LAD
ল্যাডার লজিক বা LAD হল সবথেকে পপুলার একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ যা কিনা প্রোগ্রামেবল লজিক কনট্রোলার বা PLCতে প্রোগ্রামিং এর জন্য ব্যাবহার করা হয়। এই ল্যাংগুয়েজে প্রোগ্রামিং লেখা অনেকটা ইলেকট্রিকাল ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম এর মত দেখতে হয়। নিচে LAD ডায়াগ্রামের একটি উদাহরন দেওয়া হল।

উপরের ছবিটিতে প্রথমে
বাঁদিকে একটি সাধারণ ইলেক্ট্রিক্যাল সার্কিট দেখানো হয়েছে,
যেখানে S1, S2 এবং S3
নরম্যালি ওপেন (Normally
Open) বা NO সুইচ। এখানে S1 এবং S2 সুইচ দুটিকে একসাথে অ্যাক্টিভেট করলে অথবা শুধুমাত্র S3 সুইচটিকে অ্যাক্টিভেট করলেই L1 লাইটটি জ্বলবে। এখন অনুরূপ সার্কিটটিকে যদি LADDER লজিকে লেখা যায় তবে সেটি ডানদিকে দেখানো চিত্র অনুযায়ী দেখা
যাবে। যেখানে I 0.1, I 0.2, এবং I 0.3
নরম্যালি ওপেন বা ‘NO’ ইনপুট এবং Q 0.0কে আউটপুট হিসাবে নেওয়া
হয়েছে, এবং এই আউটপুট কে কাজে লাগিয়ে লাইট জ্বালানো বা কোন মোটরকে চালু করা
ইত্যাদি কাজ করানো সম্ভব। এখানে প্রোগ্রাম অনুযায়ী I 0.1এবং I 0.2 এই দুটি ইনপুটকে যদি অ্যাক্টিভেট করা হয়,
তবে Q 0.0 অ্যাক্টিভেটেড হবে অর্থাৎ Q 0.0 তে আউটপুট পাওয়া যাবে। অনুরূপভাবে শুধুমাত্র I 0.3 অ্যাক্টিভেট করলেই Q 0.0 তে আউটপুট পাওয়া যাবে।
ল্যাডার লজিকে বাঁদিকের
ভার্টিক্যাল লাইনকে পাওয়ার বা ‘Energized Conductor’ হিসাবে ধরা হয় এবং ডানদিকের ভার্টিক্যাল লাইনকে আউটপুট এলিমেন্ট
বা ‘Return Path’ হিসাবে ধরা হয়। ল্যাডার লজিক ডায়াগ্রাম সবসময় বাম দিক থেকে ডান দিকে এবং উপর
থেকে নিচে পড়া হয়। ল্যাডার ডায়াগ্রাম
সাধারানত কয়েকটি সেকশানে ভাগ করা হয় এবং এগুলিকে বলা হয় ‘Rungs’ বা ‘Networks’ । উপরের ছবিতে একটিমাত্র rung কে দেখানো হয়েছে। প্রতিটি Rung সাধারনত কতগুলি ইনপুট ইন্সট্রাকশন এর সমন্নয়ে তৈরি হয় এবং এই
ইনপুট ইন্সট্রাকশন গুলির থেকে প্রতিটি Rung এর একটিই মাত্র লজিক্যাল আউটপুট নেওয়া হয় এবং একটি PLC প্রোগ্রাম এইরকম অসংখ্য rungs বা নেটওয়ার্কের সমন্নয়ে তৈরি করা হয়। আলাদা অধ্যায়ে এই LADDER ডায়াগ্রাম সম্পর্কে
বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে।
স্টেটমেন্ট লিস্ট
বা STL
স্টেটমেন্ট লিস্ট
বা STL হল আরও একটি পপুলার PLC প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। এখানে কি কি অপারেশান (Operation) করতে
হবে তা প্রোগ্রামের বাঁদিকে লেখা হয় এবং অপারেন্ড (Operand) বা কি কি আইটেমকে নিয়ে
অপারেশান করতে হবে সেগুলিকে ডানদিকে লেখা হয়। উপরের ল্যাডার লজিক প্রোগ্রামটিকেই স্টেটমেন্ট লিস্ট প্রোগ্রামে কিভাবে লেখা
হবে, তা নিচে বোঝানো হল।

উপরে দেওয়া উদাহরন
অনুযায়ী ‘A’ দিয়ে ‘অ্যান্ড’ (AND) লজিক অপারেশান এবং ‘O’
দিয়ে ‘অর’ (OR) লজিক অপারেশান বোঝানো হয়েছে। এছাড়া I0.1, I0.2, I0.3 এবং Q0.0 এক্ষেত্রে
অপারেন্ড। এখানেও প্রোগ্রাম
অনুসারে I0.1 এবং I0.2 দুটো ইনপুট একসাথে যদি অন থাকে, তবে আউটপুট Q0.0 অ্যাক্টিভেট
হবে কারন ঐ দুটো ইনপুট ‘অ্যান্ড’ (AND) অপারেশানে রয়েছে, অথবা যদি শুধুমাত্র I0.3 ইনপুট অ্যাক্টিভেট
থাকে, তাহলেও Q0.0 অ্যাক্টিভেট হবে। কারন I0.3 ইনপুটটি প্রথম দুটি ইনপুটের সাথে অর (OR) অপারেশানে রয়েছে। স্টেট্মেন্ট লিস্টে লেখা একটি PLC প্রোগ্রামে বিভিন্ন ধরনের অপারেশান এবং অপারেন্ড
ব্যাবহার করা হয়ে থাকে এবং একটি সম্পূর্ণ PLC প্রোগ্রামে এই ধরনের অসংখ্য লাইনকে পরপর লিখে একটি
সম্পুর্ণ স্টেটমেন্ট লিস্ট প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়। যদিও বর্তমানে PLCতে এই ল্যাঙ্গুয়েজে লেখা প্রোগ্রামের ব্যাবহার খুবই সীমিত।
ফাংশান ব্লক ডায়াগ্রাম
বা FBD
কিছু কিছু PLC প্রোগ্রামার ফাংশান ব্লক ডায়াগ্রাম বা FBD প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে PLC প্রোগ্রাম লিখে থাকেন। এক্ষেত্রে অপেরেশান বা ফাংশানগুলি একটি
ব্লকের মধ্যে আলাদাভাবে দেখানো হয়, এবং অপারেন্ড গুলিকে ব্লকের বাইরে লেখা হয়। প্রোগ্রামের আলাদা আলাদা ফাংশানের জন্য
আলাদা ব্লক ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। উপরের একই উদাহরনটিকে যদি ফাংশান ব্লক ডায়াগ্রামে লেখা যায়,
তবে তা কিভাবে লেখা হবে তা নিচে দেখানো হল।
এখানে I0.1 এবং
I0.2 ইনপুট দুটিকে অ্যান্ড (AND) অপারেশান ব্লকে যোগ করা হয়েছে এবং ঐ ইনপুটদুটির রেজাল্টকে
I0.3 ইনপুটের সাথে অর (OR) অপারেশানের ব্লকের সাথে যোগ করা হয়েছে। এরপর ঐ অর
(OR) অপারেশানের রেজাল্ট হিসাবে আউটপুট
Q0.0 নেওয়া হয়েছে। একটি PLC প্রোগ্রামে এই ধরনের অসংখ্য ফাংশান ব্লক পরপর লিখে
একটি সম্পুর্ণ প্রোগ্রাম লেখা হয়। ফাংশান ব্লক ডায়াগ্রামে লেখা PLC
প্রোগ্রামের ব্যাবহারও তুলনামূলক খুবই সীমিত।
PLC কে কিভাবে
প্রোগ্রাম করা হয়
যে কোন PLC
ইউনিটের মধ্যেই CPU এর সাথে একটি কমিউনিকেশান পোর্ট (Communication Port) থাকে,
যার সাহায্যে বাইরের কোন প্রোগ্রামিং ডিভাইসের সাথে PLCর সংযোগ করা হয়। সাধারনত এই প্রোগ্রামিং ডিভাইস দুই ধরনের হয়ে থাকে, প্রথমটি একটি ছোট হ্যান্ড-হেল্ড ইউনিট (Hand-held Unit) যার সাহায্যে
সরাসরি PLCর মধ্যে প্রোগ্রাম লেখা যায়। এবং অপরটি হল সাধারন কম্পিউটার, যার মধ্যে একটি বিশেষ সফটওয়্যার ইন্সটল
(Install) করা থাকে, যা কিনা শুধুমাত্র PLC প্রোগ্রামিং এর জন্যই ব্যাবহার করা যায়। সাধারনত কোন নির্দিষ্ট কোম্পানির PLC র ক্ষেত্রে এই প্রোগ্রামিং
সফটওয়্যারও নির্দিষ্ট থাকে। উদাহরণস্বরূপ SIEMENS কোম্পানির STEP 7-Micro , WIN32 ইত্যাদি PLC প্রোগ্রামিং সফটওয়্যার
শুধুমাত্র SIEMENS নির্মিত S7-200 PLCর ক্ষেত্রেই ব্যাবহার করা যায়, তাকে অন্য কোম্পানির যেমন
MITSUBISHI, OMRON ইত্যাদি PLC প্রোগ্রামিং এর জন্য ব্যাবহার করা যায় না। সেক্ষেত্রে ওই সকল কোম্পানির নিজস্ব প্রোগ্রামিং
সফটওয়্যার ব্যাবহার করতে হয় এবং ‘হ্যান্ড-হেল্ড’ প্রোগ্রামিং
ইউনিটের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। অর্থাৎ SIEMENS কোম্পানির
হ্যান্ড-হেল্ড ইউনিট দিয়ে MITSUBISHI বা
OMRON নির্মিত PLCর প্রোগ্রাম করা যাবে না। তবে PLC প্রোগ্রামিং এর জন্য হ্যান্ড-হেল্ড ইউনিটের তুলনায় কম্পিউটারের
ব্যাবহার সবসময়েই সুবিধাজনক।

পূর্বেই আলোচনা
করা হয়েছে PLC প্রোগ্রামিং এর জন্য তিন ধরনের ল্যাঙ্গুয়েজ সবথেকে বেশী ব্যাবহার
করা হয়, এগুলি হল ল্যাডার ডায়াগ্রাম বা LAD, স্টেটমেন্ট লিস্ট বা STL এবং ফাংশান
ব্লক ডায়াগ্রাম বা FBD। আবার এগুলির মধ্যে বেশীরভাগ কোম্পানিই PLC প্রোগ্রামিং এর জন্য যে
ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যাবহার করে থাকেন, সেটি হল ল্যাডার ডায়াগ্রাম বা LAD। কম্পিউটারে PLC প্রোগ্রামিং সফটওয়্যারের সাহায্যে
প্রথমে ল্যাডার ডায়াগ্রামে PLC প্রোগ্রামটিকে ধাপে ধাপে এবং প্রয়োজন অনুসারে
বিভিন্ন ব্লকে লেখা হয়। সাধারনত বড় PLC
প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজের ধরন অনুসারে আলাদা আলাদা ব্লক ব্যাবহার করা হয়,
যাতে পরবর্তীকালে ওই প্রোগ্রামটি বুঝতে সুবিধা হয় বা প্রোগ্রামের মধ্যে কোন ভুলভ্রান্তি
হলে তা সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব হয়। PLC প্রোগ্রামিং সফটওয়্যারের
সাহায্যে প্রোগ্রাম লেখার পর সেটি ওই সফটওয়্যারের মধ্যেই প্রোগ্রামটিকে “RUN”
করিয়ে দেখা হয় প্রোগ্রামিং সিকোয়েন্সে কোথাও কোন ভুল ত্রুটি রয়েছে কিনা। এরপর সম্পুর্ন প্রোগ্রামটি সঠিকভাবে লেখা হয়ে গেলে সেটি কম্পিউটার
থেকে একটি কেবলের সাহায্যে PLCতে পাঠানো হয় এবং
PLC কে RUN মোডে চালিয়ে দেখা হয় সেটি ঠিকঠাক কাজ করছে
কিনা। PLC কে RUN করানোর পর যদি দেখা যায়
প্রোগ্রামের মধ্যে কোন গন্ডগোল রয়েছে, তখন প্রোগ্রামকে বাইরের কম্পিউটারে ঠিক করে
তা পুনরায় আবার ওই PLCতেই পাঠানো হয়, এবং সেক্ষেত্রে নতুন করে পাঠানো প্রোগ্রামটি
পুরনো প্রোগ্রামের উপর ওভাররাইট (Overwrite) করে থাকে।
বেশীরভাগ ছোট বা
মাঝারি PLCর সাথে যেহেতু
কোন ডিসপ্লে ইউনিট থাকে না তাই সেক্ষেত্রে PLCর মধ্যে ‘RUN’ করা প্রোগ্রামকে
বাইরে থেকে দেখার বা সরাসরি ‘EDIT’ করার কোন সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে সরাসরি PLCর মধ্যে RUN করা
প্রোগ্রামকে দেখা বা ‘EDIT’ করার প্রয়োজন
হলে আলাদাভাবে কম্পিউটারকে PLCর সাথে যুক্ত করতে হয়। তবে অ্যাডভান্সড PLC গুলির ক্ষেত্রে যেমন CNC কন্ট্রোলারের সাথে বা রোবোটিক আর্মের সাথে যুক্ত PLCর ক্ষেত্রে (যেখানে আলাদা ডিসপ্লে ইউনিট ব্যাবহার করা
হয়) রানিং PLC প্রোগ্রাম দেখা
এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তাকে ‘EDIT’ করাও সম্ভব। তবে অ্যাডভান্সড PLC গুলির ক্ষেত্রেও সাধারনত বাইরের কম্পিউটারেই প্রথমে
প্রোগ্রাম করে PLCতে পাঠানো হয়
এবং পরবর্তীতে সামান্য ভুলভ্রান্তি PLCর সাথে যুক্ত কি-বোর্ড ও ডিসপ্লে ইউনিটের সাহায্যে ঠিক করা হয়।
PLCতে ইনপুট
এবং আউটপুট ডিভাইসের সাথে প্রোগ্রামের সম্পর্ক কি?
PLCতে ইনপুট
ডিভাইসগুলি সবসময় ইনপুট মডিউলের সাথেই যুক্ত থাকে এবং আউটপুট ডিভাইসগুলিকে সংযোগ
করা হয় আউটপুট মডিউলের সাথে। CPUর মধ্যে অবস্থিত PLC প্রোগ্রাম এবং ওই প্রোগ্রামের লজিক্যাল নির্দেশাবলী
ও তার সাথে সাথে ইনপুট ডিভাইসগুলির স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ করেই কেবলমাত্র আউটপুট
ডিভাইসগুলির স্ট্যাটাস পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ PLC প্রোগ্রামের সাথে ইনপুট আউটপুট ডিভাইসগুলির এক নিবিড় সম্পর্ক
রয়েছে। নিচে পাশাপাশি দুটি ছবির সাহায্যে
বোঝানো হয়েছে PLC প্রোগ্রামের সাথে ইনপুট আউটপুট ডিভাইসগুলির সংযোগ ব্যাবস্থা
(এক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং এর সাহায্যে একটি ল্যাম্পকে জ্বালানো নেভানো হয়েছে)।
PLC প্রোগ্রামে
ব্যাবহৃত বিভিন্ন এলিমেন্ট
কোম্পানি
অনুসারে একটি PLCতে প্রোগ্রাম লেখার জন্য বিভিন্ন ধরনের এলিমেন্ট (Internal এবং External)
এবং সেগুলির জন্য আলাদা সিম্বল ব্যাবহার করা হয়। তবে মোটামুটি প্রায় সব ধরনের PLCর ক্ষেত্রেই
এলিমেন্টগুলি যদিও একই থাকে, কিন্তু তাদের সিম্বলগুলি কখনো কখনো আলাদা হয়। নিচে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের PLCতে বহুল ব্যাবহৃত কিছু
এলিমেন্ট এবং PLC প্রোগ্রামে ব্যাবহৃত তাদের সিম্বলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১। ইনপুট
পূর্বে আলোচনা
করা হয়েছে PLCর বাইরে
অবস্থিত ইনপুট ডিভাইসগুলি থেকে PLCতে যে ‘সিগন্যাল Information’ নেওয়া হয়,
সেগুলিকে PLC প্রোগ্রামে ‘Input’ হিসাবে অ্যাড্রেস করা হয়, এবং প্রোগ্রামে সাধারনত এই ইনপুটগুলিকে
লজিক্যাল সার্কিটের মধ্যে ব্যাবহার করা হয় বিভিন্ন আউটপুট, টাইমার, কন্টাক্টর
ইত্যাদিকে অ্যাক্টিভেট করার জন্য। PLC প্রোগ্রামে ‘I’, ‘X’ ইত্যাদি দিয়ে এবং তার সাথে নিউম্যারিক সংখ্যা যুক্ত করে ‘Input Address’ বোঝানো হয়ে থাকে, যেমন ‘I 1.5’ অথবা ‘X 4.7’ ইত্যাদি। SIEMENS এর
PLCর ক্ষেত্রে যেখানে এই ইনপুট অ্যাড্রেস ‘I’ দিয়ে বোঝানো হয়, সেখানে FANUC এর PLCর ক্ষেত্রে তা ‘X’ দিয়ে বোঝানো হয়ে থাকে।
২। আউটপুট
আউটপুটের
ক্ষেত্রে PLCর বাইরে
অবস্থিত আউটপুট ডিভাইসগুলিকে অ্যাক্টিভেট করানোর জন্য PLC থেকে যে সিগন্যাল Information দেওয়া হয়, সেগুলিকে PLC প্রোগ্রামে Output হিসাবে
অ্যাড্রেস করা হয় এবং প্রোগ্রামে সাধারনত এই সকল আউটপুটকে অ্যাক্টিভেট করানোর জন্য
ইনপুটগুলিকে বিভিন্ন লজিকে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। PLC প্রোগ্রামে ‘Q’, ‘Y’ ইত্যাদি দিয়ে এবং তার সাথে নিউম্যারিক সংখ্যা যুক্ত করে
Output Address বোঝানো হয়, যেমন Q 1.5 অথবা Y 4.7 ইত্যাদি। SIEMENS এর PLCর ক্ষেত্রে যেখানে এই আউটপুট অ্যাড্রেস ‘Q’
দিয়ে বোঝানো হয়, সেখানে FANUC এর তৈরি PLCর ক্ষেত্রে তা ‘Y’ দিয়ে বোঝানো হয়ে থাকে।
৩। ইন্টার্নাল রিলে (Internal Relay)
PLCতে ‘ইন্টার্নাল রিলে’ বলতে বোঝায় এমন একটি এলিমেন্ট যা কিনা প্রয়োজন অনুসারে কোন ডাটা বা কোন Bit
কে Hold করে রাখতে পারে, এবং এটিকে রিলের মতই ON বা OFF করা যায় বা এর
সাহায্যে PLCর অন্য ডিভাইসকেও ON বা OFF করা যেতে পারে। PLCর মধ্যে এই
ধরনের বহু সংখ্যক ইন্টার্নাল রিলে থাকতে পারে। যদিও এগুলির সত্যিকার বা ফিজিক্যাল কোন উপস্থিতি নেই,
কিন্তু এগুলি PLCর স্টোরেজ মেমোরির মধ্যেই থাকে। PLC ম্যানুফ্যাকচারাররা এই ইন্টার্নাল রিলেকে আবার
বিভিন্ন নাম দিয়ে থাকে, যেমন SIEMENS এগুলিকে ফ্ল্যাগ (Flag) বলে, MITSUBISHI
এদেরকে অক্সিলারি রিলে (Auxiliary Relay) বলে, TOSHIBA ইন্টার্নাল রিলে (Internal
Relay) বলে ইত্যাদি। ইন্টার্নাল
রিলে সাধারনত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, রিটেন্টিভ এবং নন-রিটেন্টিভ (Retentive and
Non-Retentive)। যে ইন্টার্নাল রিলেগুলি PLCতে পাওয়ার
সাপ্লাই বন্ধ করা হলেও বা PLC কে OFF করা হলেও তার
শেষ অ্যাক্টিভেশান অবস্থাটিকে ধরে রাখে, সেগুলিকে ‘রিটেন্টিভ ইন্টার্নাল রিলে’ বলে এবং যেগুলির স্ট্যাটাস PLCতে পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধের সঙ্গে সঙ্গেই ‘Logic
0’ হয়ে যায়, সেগুলিকে ‘নন-রিটেন্টিভ ইন্টার্নাল রিলে’ বলা হয়। SIEMENS এর PLCর ক্ষেত্রে এই
ইন্টার্নাল রিলেকে ‘M’ দিয়ে বোঝানো
হয়ে থাকে।
৪। সেট কয়েল
পূর্বে
উল্লিখিত আউটপুটের মতই ‘সেট কয়েলের’ ক্ষেত্রেও
বিভিন্ন ইনপুট বা ইন্টার্নাল রিলের সাহায্যে একটি সেট কয়েলকে অ্যাক্টিভেট করা হয়। যখন সেট কয়েলকে অ্যাক্টিভ করার কন্টাক্টগুলির সম্মিলিত স্ট্যাটাস ‘Logic 1’ হয়, তখন সেট কয়েলের স্ট্যাটাসও ‘Logic 1’ হয় এবং সেটি Set হয়েই থাকে। অর্থাৎ কন্টাক্টগুলির সম্মিলিত স্ট্যাটাস
‘Logic 0’ হয়ে গেলেও সেট
কয়েলের স্ট্যাটাস কিন্তু ‘Logic 1’ হয়েই থেকে যায়। সেট কয়েল
ব্যাবহার করে সাধারনত কোন আউটপুটকে, টাইমারকে, কাউন্টারকে বা ইন্টার্নাল রিলেকে ON করা হয়। PLC প্রোগ্রামে সেট
কয়েলকে সাধারনত ‘S’ সিম্বল দিয়ে
বোঝানো হয়।
৫। রিসেট কয়েল
সেট কয়েলের মতই
‘রিসেট কয়েলের’ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ইনপুট বা ইন্টার্নাল রিলের সাহায্যে একটি রিসেট কয়েলকে
অ্যাক্টিভ করা হয়ে থাকে। । যখন রিসেট কয়েলকে অ্যাক্টিভ করার কন্টাক্টগুলির সম্মিলিত
স্ট্যাটাস ‘Logic 1’ হয়, তখন রিসেট
কয়েলের স্ট্যাটাস আগে থেকে ‘Logic 1’ থাকলে সেটি ‘Logic 0’ হয়ে যায়, এবং সেটি Reset হয়ে থাকে। অর্থাৎ কন্টাক্টগুলির সম্মিলিত স্ট্যাটাস ‘Logic 0’ হয়ে গেলেও রিসেট কয়েলের স্ট্যাটাস ‘Logic 0’ হয়েই থাকে । যদি রিসেট কয়েলের স্ট্যাটাস পূর্বেই ‘Logic 0’ হয়ে থাকে তবে অ্যাক্টিভেট করার কন্টাক্টগুলির সম্মিলিত স্ট্যাটাস
‘Logic 1’ হলেও রিসেট
কয়েলের স্ট্যাটাসের কিন্তু কোন পরিবর্তন হয় না। PLCতে সাধারনত
টাইমার, কাউন্টার বা কোন ইন্টার্নাল রিলেকে রিসেট করার জন্য রিসেট কয়েলের ব্যাবহার
হয়ে থাকে এবং PLC প্রোগ্রামে
রিসেট কয়েলকে সাধারনত ‘R’ দিয়ে বোঝানো হয়।
৬। টাইমার
PLC তে টাইমার
ব্যাবহার করা হয় সাধারনত কোন টাইম ইন্টারভেলকে
পরিমাপ করার জন্য। PLCর মধ্যে এই ধরনের
টাইমারগুলির যদিও কোন ফিজিক্যাল অস্তিত্ব নেই, কিন্তু প্রোগ্রামিং এর প্রয়োজনে এই টাইমারগুলিকে
সহজেই ব্যাবহার করা যায়। PLCর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের টাইমার
থাকে, শুধু প্রয়োজন অনুসারে সেগুলিকে প্রোগ্রামের মধ্যে ‘Call’
করা হয়। PLC প্রোগ্রামে টাইমারকে সাধারনত ‘T’ দিয়ে এবং তার
সাথে নিউমেরিক সংখ্যা যুক্ত করে বোঝানো হয়,
যেমন T5, T10 ইত্যাদি। টাইমারের আউটপুটের সাহায্যে সাধারনত কোন ইন্টার্নাল রিলে
বা আউটপুটকে অ্যাক্টিভ বা ডি-অ্যাক্টিভ করা হয়। পরবর্তিতে PLCতে ব্যাবহৃত বিভিন্ন প্রকারের টাইমার ও তাদের কর্মপদ্ধতি সম্মন্ধে বিস্তৃত
আলোচনা করা হয়েছে।
৭। কাউন্টার
PLC
প্রোগ্রামে কাউন্টার ব্যাবহার করা হয় সাধারনত কোন
বস্তুকে গোনা অর্থাৎ ‘Count’ করার জন্য। PLCতে এই কাউন্টার সাধারনত কোন সিগন্যালের UP এবং DOWN কাউন্ট করে থাকে। টাইমারের মতই এগুলিরও PLCতে কোন ফিজিক্যাল অস্তিত্ব নেই, এগুলি PLCর মধ্যেই Inbuilt থাকে এবং শুধুমাত্র প্রোগ্রামের প্রয়োজন অনুসারে ব্যাবহার
করা হয়। বিভিন্ন কোম্পানির PLCতে
কাউন্টারের সিম্বল এবং প্রোগ্রামিংএ লেখার ধরন সাধারনত আলাদা হয়ে থাকে, আবার কখনো
একই কোম্পানির বিভিন্ন মডেলের PLCর জন্যও কাউন্টারের লেখার ধরন আলাদা হয়। PLC প্রোগ্রামে কাউন্টারকে সাধারনত ‘C’ দিয়ে এবং তার সাথে নিউম্যারিক সংখ্যা যুক্ত করে বোঝানো
হয়, যেমন C5,
C10 ইত্যাদি। পরবর্তিতে PLCতে ব্যাবহৃত বিভিন্ন প্রকারের কাউন্টার, তাদের কর্মপদ্ধতি এবং PLC
প্রোগ্রামে তাদের ব্যাবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তৃত
আলোচনা করা হয়েছে।