বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১

কন্ট্রোল সিস্টেম

আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজে ও বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যে সমস্ত ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসগুলি ব্যাবহার করে থাকি, সেগুলিকে অবশ্যই কন্ট্রোল করার প্রয়োজন হয় এই কন্ট্রোল করা বলতে যেমন ডিভাইসটিকে চালু বা বন্ধ করা বোঝায়, তেমনই ডিভাইসটির চালু থাকার সময়, তাপমাত্রার অবস্থা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করাও এর আওতায় পড়ে এছাড়াও আলো, ধ্বনি ইত্যাদিও কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার মধ্যে পড়ে থাকে, নতুবা ডিভাইসগুলিকে সঠিকভাবে ব্যাবহার করা সম্ভব হয় না উদাহরন স্বরূপ বলা যায়, একটি রুম এয়ার কন্ডিশনারকে যদি কন্ট্রোল করার কোন ব্যাবস্থা না থেকে থাকত, বা কোন মিউজিক সিস্টেমের ভলিউমকে  যদি কন্ট্রোল করা না যেত, তবে সেগুলি ব্যাবহার করা খুবই অসুবিধাজনক হততাই যে কোন ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের সাথেই একটি করে কন্ট্রোল ব্যাবস্থা থাকাও একান্তই আবশ্যিক যে কোন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থা মূলত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, ম্যানুয়াল কন্ট্রোল এবং অটোমেটিক কন্ট্রোল

 ম্যানুয়াল কন্ট্রোল

এই ব্যাবস্থায় ডিভাইসটিকে ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করা হয়, অর্থাৎ প্রয়োজন অনুসারে ডিভাইসটিকে নিজের ইচ্ছানুসারে ম্যানুয়ালি চালু বা বন্ধ করা যায় উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে, একটি লাইটকে সুইচের সাহায্যে জ্বালানো বা নেভানো বা একটি মোটর স্টার্টারের সুইচকে চাপ দিয়ে মোটরটিকে চালু বা বন্ধ করা অথবা রেগুলেটারের সাহায্যে একটি ফ্যানের ঘোরার স্পিডকে কম বা বেশী করা ইত্যাদি

 অটোমেটিক কন্ট্রোল

এই ব্যাবস্থায় ডিভাইসকে সাধারনত কিছু নির্দিষ্ট অবস্থান বা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কন্ট্রোল করা হয় অর্থাৎ একটি ডিভাইসকে কোন একটি বিশেষ সময় অনুসারে চালু বা বন্ধ করা বা তাপমাত্রা অনুসারে চালু থাকার ব্যাবস্থা করা অথবা লাইট বা আলোর তীব্রতা অনুসারে ডিভাইসটিকে কাজ করানো ইত্যাদি, স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থার মধ্যে পড়ে যদিও প্রতিটি স্বয়ংক্রিয় ব্যাবস্থার সাথে সাথেই ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল ব্যাবস্থাও থাকে অর্থাৎ এটি একটি স্বয়ংক্রিয় এবং ম্যানুয়াল এই দুই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থার সহাবস্থান উদাহরণস্বরূপ কোন একটি ব্যাবস্থাকে ম্যানুয়ালি স্টার্ট  বা চালু করা হতে পারে আবার একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় পৌঁছানোর পর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হতে পারে কোন ডিভাইস বা মেশিনকে অটোমেটিক কন্ট্রোলিং এর জন্য সাধারনত তিন ধরনের ব্যাবস্থা দেখা যায়, এগুলি হল নিম্নরূপ

 রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টর

 মাইক্রো-কন্ট্রোলার

 প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC

 রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টর

রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টরের সাহায্যে খুব সহজেই কোন ডিভাইসের স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থা করা যায়, এবং এই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থা বিভিন্ন যায়গায় দেখতে পাওয়া যায় এই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থায় সাধারনত বিভিন্ন ছোট ছোট লজিক্যাল অপারেশান  খুব সহজেই করা সম্ভব তবে এই ধরনের ব্যাবস্থার মূল অসুবিধা হল রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টরগুলি অনেকগুলি তারের সাহায্যে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে, ফলে  কোন লজিক্যাল অপারেশানের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে, তা খুবই অসুবিধাজনক ও সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়ে এছাড়াও কোন বড় এবং জটিল লজিক্যাল অপারেশানের ক্ষেত্রেও এই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থা খুবই অসুবিধাজনক  যদিও খুব ছোট ছোট অটোমেটিক মেশিনে যেখানে ছোট লজিক্যাল অপারেশানের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে এখনো এই ধরনের রিলে, টাইমার এবং কন্টাক্টরের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থা দেখতে পাওয়া যায় নিচে এই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার একটি ছবি দেওয়া হল।

        

 মাইক্রো-কন্ট্রোলার

মাইক্রোকন্ট্রোলার সম্পর্কে এই বইটির প্রথম পার্টে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে মাইক্রো-কন্ট্রোলারকে একটি স্পেশাল পারপাস কম্পিউটার বলা যেতে পারে, যা কিনা একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্যই ব্যাবহার করা যায় অর্থাৎ মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট মেশিনের কেবলমাত্র কিছু নির্দিষ্ট কাজের নির্দেশ দেওয়া থাকে, এবং ওই মেশিনটি কেবলমাত্র মাইক্রো-কন্ট্রোলারের দেওয়া নির্দেশ অনুসারেই কাজ করে উদাহরন স্বরূপ বলা যেতে পারে ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রো-ওয়েভ ওভেন ইত্যাদি, যেখানে স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থার জন্য মাইক্রো-কন্ট্রোলার ব্যাবহৃত হয় এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থার ব্যাবহার যদিও সরল এবং খুবই সুবিধাজনক, কিন্তু এই ব্যাবস্থার মূল অসুবিধা হল মেশিনটির স্বয়ংক্রিয় কন্ট্রোল ব্যাবস্থা কেবলমাত্র মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মধ্যেকার নির্দেশ অনুসারেই চালিত হয় এবং মেশিন ব্যাবহারকারির পক্ষে ওই মাইক্রো-কন্ট্রোলারের মধ্যেকার নির্দেশে কোনপ্রকার পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না তাছাড়া জটিল কন্ট্রোলিং অপারেশান এবং যেক্ষেত্রে অনেকগুলি ডিভাইসকে একসাথে এবং বিভিন্নভাবে কন্ট্রোলিং করার প্রয়োজন হয় বা কন্ট্রোলিং সিকোয়েন্স পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে এই ধরনের মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যাবহার করা অসুবিধাজনকনিচে এই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার একটি ছবি দেওয়া হল।

              

 প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC

পূর্বে বর্ণিত দুই ধরনের কন্ট্রোলিং ব্যাবস্থার অসুবিধাগুলি সহজেই PLCর সাহায্যে দূর করা যায় প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC বলতে বোঝায়, একটি স্পেশাল টাইপের ডিজিটাল কন্ট্রোলার, যেখানে কিছু ইনপুট ডিভাইসের (Input Device) অবস্থার উপর নির্ভর করে এবং কন্ট্রোলারের মধ্যে লিখিত প্রোগ্রামের (Program) নির্দেশ অনুসারে কিছু আউটপুট ডিভাইসকে (Output Device) নিয়ন্ত্রন করে কোন মেশিনকে বা প্রসেসকে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন বা অটোমেটিক কন্ট্রোল করা হয় এই ধরনের কন্ট্রোল ব্যাবস্থার সবথেকে বড় সুবিধা হল এর সাহায্যে খুব সহজেই কোন মেশিন বা প্রসেসের ওপর যেমন সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রন পাওয়া যায়, তেমনই প্রয়োজন অনুযায়ী খুব সহজেই ও অল্প সময়ের মধ্যেই অপারেশানের পরিচালন পদ্ধতি বা সিকোয়েন্স অফ অপারেশান পরিবর্তন করা সম্ভব হয় নিচে বিভিন্ন ধরনের কয়েকটি PLCর ছবি দেওয়া হল

             

 যে কোন অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থায় PLC ব্যাবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে, এগুলি নিম্নরুপ

 এটির রেস্পন্স টাইম খুব কম অর্থাৎ এটি খুব দ্রুত কাজ করে

 এক্ষেত্রে অপারেশানাল সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন খুব সহজেই করা সম্ভব

 প্রচলিত রিলে সিস্টেমের তুলনায় ইলেকট্রিক্যাল ওয়ারিং এক্ষেত্রে অনেক কম

 জটিল লজিক্যাল অপারেশান এর সাহায্যে খুব সহজেই করা সম্ভব

 অন্যান্য ডিভাইসের যেমন পিসি বা প্রিন্টার ইত্যাদির এটির সাথে যোগাযোগ সম্ভব

 অপারেশান সিকোয়েন্সে কোন ভুল হলে তা এক্ষেত্রে সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়

 বড় ও জটিল অপারেশানের ক্ষেত্রে এই ব্যাবস্থায় তুলনামুলক খরচ অনেক কম

 চালু সিস্টেম থেকে প্রোগ্রাম কপি পেস্টের মাধ্যমে নতুন সিস্টেম দ্রুত চালু করা যায়  

         

বর্তমানে বিভিন্ন মেশিনে, বিভিন্ন প্রসেস প্ল্যান্টে বা ছোটখাটো অন্যান্য অনেক লজিক্যাল অপারেশানে প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার বা PLC ব্যাবহার করা হয়ে থাকে নিম্নলিখিত ডিভাইসগুলিতে স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন বা অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থায় PLCর বহুল ব্যাবহার দেখা যায়

  বিভিন্ন CNC এবং NC মেশিনে

 প্রোডাকশান ও অ্যাসেম্বলি লাইনে

 অটোমেটিক ডোর, লিফট ইত্যাদিতে

 স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যাবস্থায়

 বিভিন্ন জটিল লাইটিং কন্ট্রোল সিস্টেমে

 রোবোটিক আর্মের মুভমেন্টে

 বিভিন্ন ছোট ছোট অটোমেটিক মেশিনে

অর্থাৎ বর্তমানে প্রায় সব ধরনের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রন বা অটোমেটিক কন্ট্রোল ব্যাবস্থায় যেখানে অপারেশানাল সিকোয়েন্সের মাঝে মধ্যে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় বা সিকোয়েন্সিয়াল অপারেশান মনিটরিং করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে PLCর বহুল ব্যাবহার হয়ে থাকে এছাড়াও কোন জটিল মেশিনের ততোধিক জটিল লজিক্যাল অপারেশান ছোট বা বড় বিভিন্ন ধরনের PLC ব্যাবহার করে সহজেই করা হয় PLCর আকার বা মডেল সাধারনত নির্ভর করে থাকে সেটির কত সংখ্যক ইনপুট ও আউটপুট সিগন্যাল নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা (Input and Output Signal Handling capacity), প্রোগ্রামের আকার এবং মেমরি ক্যাপাসিটির (Program Length and Memory capacity) ওপর বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির এবং বিভিন্ন সাইজের ও মডেলের PLC পাওয়া যায় এগুলির মধ্যে SIEMENS, ABB, DELTA, OMRON, BOSCH, MITSUBISHI, TOSHIBA ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য PLC গুলির ভিতরের ইলেক্ট্রনিক সার্কিট অর্থাৎ কন্সট্রাকশান আলাদা আলাদা হলেও সাধারনত এদের সকলের কর্ম্পদ্ধতি মোটামুটিভাবে একই রকমের হয়ে থাকে যদিও হার্ডওয়্যার কনফিগারেশান এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রোগ্রামের সিম্বল ও প্রোগ্রাম লেখার ধরনে এদের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য দেখা যায়যেমন খুব ছোট PLCতে CPU, ইনপুট/আউটপুট পোর্ট ইত্যাদি একটিই মাত্র ছোট মডিউলের মধ্যে সম্মিলিত অর্থাৎ কম্প্যাক্ট অবস্থায় থাকে, কিন্তু বড় PLCর ক্ষেত্রে এগুলির জন্য আলাদা আলাদা মডিউল ব্যাবহার করা হয় এছাড়াও কিছু স্পেশাল টাইপের PLCও বাজারে পাওয়া যায়, যা কিনা সম্পুর্নরূপেই PLC User এর প্রয়োজন অনুসারে PLC ম্যানুফ্যাকচারাররা তৈরি করে থাকেন যেমন CNC মেশিনের ক্ষেত্রে PLC সাধারনত CNC কন্ট্রোলারের মধ্যেই Embedded অবস্থায় থাকে এবং সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে PLC এর CPU বা ইনপুট/আউটপুট মডিউলকে চিহ্নিত করা যায় না তবে এখানে বোঝার সুবিধার জন্য একটি স্বতন্ত্র PLC, যা কিনা কোন CNC কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত না থেকে আলাদা এবং স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে থাকে, সেই সম্পর্কে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে যদিও প্রায় সব ধরনের PLC রই বেসিক কর্মপদ্ধতি মোটামুটি একই থাকে নিচের ছবিতে একটি কমন PLC এবং তার বিভিন্ন কম্পোনেন্ট দেখনো হল।     

              

যে কোন PLCকে বুঝতে হলে প্রথমেই PLCকে দুটি আলাদা ভাগে ভাগ করে নিতে হবে প্রথম ভাগ হল হার্ডওয়্যার পার্ট যা কিনা সাধারনত PLC ম্যানুফ্যাকচারাররা তৈরি করে থাকেন এবং পরবর্তী ভাগ হল Program পার্ট, যা সাধারনত PLC ইউজাররা নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করেন PLCতে প্রোগ্রাম লেখার জন্য সাধারনত একটি Software এর সাহায্য নেওয়া হয়, যা কিনা কোম্পানি অনুসারে ভিন্ন হয় অর্থাৎ কোন কোম্পানির PLC প্রোগ্রাম শুধুমাত্র ওই কোম্পানির তৈরি Software এর সাহায্যেই লেখা সম্ভব, সেক্ষেত্রে অন্য কোন কোম্পানির  Software ব্যাবহার করা যায় না বাজারে যে বিভিন্ন কোম্পানির রেডিমেড PLC পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে যে কোন একটির গঠন এবং প্রোগ্রামিং এর ধরন সম্মন্ধে সম্যক ধারনা থাকলে অন্যগুলিও সহজেই বুঝতে পারা যায় এখানে PLC এবং তার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে যা যা আলোচনা করা হয়েছে, তা SIEMENS এর তৈরি PLCকে মাথায় রেখেই করা হয়েছে, যা কিনা মেশিনিং টুল ইন্ডাস্ট্রিতে সবথেকে বেশী প্রচলিত PLC গুলির মধ্যে একটি

সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১

সার্ভো মোটর ও অ্যামপ্লীফায়ার

সার্ভো মোটর

সার্ভো মোটর হল একটি স্পেশাল ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ডিভাইস যা কিনা সাধারনত CNC মেশিনের অ্যাক্সিস এবং স্পীন্ডলকে চালানোর জন্য বিশেষত ব্যাবহার করা হয় এই মোটরের সাহায্যে হাই টর্ক এবং এফিসিয়েন্সি (high torque and efficiency) পাওয়া যায় খুবই কম কারেন্টের সাহায্যে এবং তুলনামুলকভাবে এই মোটরগুলি সাইজেও খুব ছোট হয়সার্ভো মোটর সাধারনত DC বা AC বা ব্রাশলেস DC মোটর হয় সার্ভো মোটরকে অনেকসময় কন্ট্রোল মোটরও বলা হয় কারন এটি মেকানিক্যাল সিস্টেমকে কন্ট্রোল করে থাকে সার্ভো মোটর সর্বদা ক্লোজড-লুপ (closed-loop) সার্ভো সিস্টেমে কাজ করে পূর্বেকার CNC মেশিনে DC এবং AC দুই ধরনের সার্ভো মোটরই ব্যাবহার করা হত, কিন্তু AC সার্ভো মোটরে DC মোটরের তুলনায় অনেক বেশী সুবিধা থাকায়, বর্তমানে বেশিরভাগ CNC মেশিনেই স্পীন্ডল এবং অ্যাক্সিস মুভমেন্টের জন্য AC সার্ভো মোটরই ব্যাবহার করা হয় নিচে বিভিন্ন  কোম্পানির কতগুলি AC সার্ভো মোটরের ছবি দেওয়া হল  

 


সার্ভো মোটরে সবসময়েই ফিডব্যাক সেন্সর লাগানো থাকে এবং এই ফিডব্যাক সেন্সর হিসাবে সাধারণত এনকোডার, ট্যাকো জেনারেটর এবং রিজলভার ব্যাবহার করা হয় আগেকার সার্ভো মোটরের ভিতরে রোটরের শ্যাফটের সাথেই পজিশান ফিডব্যাক সেন্সর হিসাবে এনকোডার এবং মোটরের ভেলোসিটি ফিডব্যাক সেন্সর হিসাবে ট্যাকো জেনারেটর নামক দুটি আলাদা ডিভাইস লাগানো থাকত কিন্তু বর্তমানে সার্ভো মোটরে এনকোডার বা রিজলভারকে একটিমাত্র ফিডব্যাক সেন্সর হিসাবে ব্যাবহার করা হয়, এবং এই এনকোডার থেকেই মোটরের পজিশান ও ভেলোসিটি এই দুটি ফিডব্যাকই নেওয়া হয়ে থাকে কখনো কখনো সার্ভো মোটরের ভিতরে ব্রেকও ব্যাবহার করা হয় যে সকল সার্ভো মোটরকে CNC মেশিনের ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসে ব্যাবহার করা হয়, সেখানে সার্ভো মোটরের ভিতরেই ব্রেক লাগানোর প্রয়োজন হয়, মেশিন বন্ধ অবস্থায় ওই ভার্টিক্যাল অ্যাক্সিসকে নিজের অবস্থানে ধরে রাখার জন্য

 

AC সার্ভো মোটর কীভাবে কাজ করে?

সাধারন AC মোটরের তুলনায় AC সার্ভো মোটরের কর্ম পদ্ধতি কিছুটা আলাদা, এখানে মোটরের মধ্যে ম্যাগনেটিক ফোর্স জেনারেট করার জন্য পারমানেন্ট ম্যাগনেট ব্যাবহার করা হয় এবং কারেন্ট মোটরের টর্ক উৎপন্ন করে যেহেতু AC সার্ভো মোটরে কোন ব্রাশ থাকে না, তাই এই মোটরের নয়েজ বা ভাইব্রেশানও খুব কম হয় AC সার্ভো মোটরের স্টেটর অংশে কোর এবং মোটরের ওয়ান্ডিং থাকে এবং রোটর অংশ মোটরের শ্যাফট, রোটর কোর এবং পারমানেন্ট ম্যাগনেট দিয়ে তৈরি হয় সার্ভো মোটরকে চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ সার্ভো ড্রাইভ বা সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার নামক একটি ডিভাইস থেকে দেওয়া হয় সার্ভো মোটরের স্টেটরের কোর অংশটি একটি বিশেষ ব্যাবস্থায় তৈরি করা হয় যাতে কিনা সাধারন মোটরের তুলনায় অনেক বেশী পরিমান কয়েল এতে ওয়ান্ডিং করা যায় এবং এর জন্য Divided core বা centralized winding এর মতো কিছু বিশেষ ব্যাবস্থা নেওয়া হয় বর্তমানে সার্ভো মোটর তৈরিতে FEM (Finite Element Simulation) technology ব্যাবহার করা হয় যাতে সার্ভো মোটরের torque ripple এবং cogging torque অনেক কম হয় এবং সাথে সাথে মোটরের সাইজও অনেক ছোট হয়। নিচে একটি AC সার্ভো মোটর এবং তার ভিতরের অংশের ছবি দেওয়া হল  

মোটরের রোটর অংশটি তৈরি হয় শ্যাফট, রোটর কোর এবং পারমানেন্ট ম্যাগনেট দিয়ে রোটরে সংযুক্ত পারমানেন্ট ম্যাগনেটের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে একই সাইজের মোটরের মধ্যেই কম বা বেশী পাওয়ার জেনারেট করা যায় সুতরাং সার্ভো মোটরের রোটরের পারমানেন্ট ম্যাগনেট সিলেকশান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটিকে এমনভাবে সিলেক্ট করা হয় যাতে কিনা মোটরের cogging torque কম হয় ফিডব্যাকের জন্য সার্ভো মোটরে সাধারনত দুই ধরেনের ডিজিটাল এনকোডার ব্যাবহার করা হয়ে থাকে এগুলি হল অপ্টিক্যাল টাইপ এবং ম্যাগনেটিক টাইপ যদিও অপ্টিক্যাল টাইপ এনকোডারই বেশী ব্যাবহার হয় কারন এই ধরনের এনকোডারের রেজলিউশান ম্যাগনেটিক টাইপ এনকোডারের থেকে অনেক বেশী হয় 

 

সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার

পুর্বেই বলা হয়েছে একটি CNC মেশিনের বেসিক ফাংশানই হল সুক্ষ এবং সয়ংক্রিয়ভাবে (precise and automatic) মেশিনের অ্যাক্সিস এবং স্পীন্ডলের মুভমেন্ট করানো সার্ভো ড্রাইভ বা সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার CNC মেশিনে ঠিক সেই কাজটিই করে সার্ভো ড্রাইভ সিস্টেম সাধারনত কতগুলি আলাদা এলিমেন্টের সমন্বয়ে তৈরি হয় এগুলি হল সার্ভো মোটর, সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার এবং বল-স্ক্রু CNC কন্ট্রোলার থেকে সাধারনত সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারে কমান্ড সিগন্যাল পাঠানো হয় এবং সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার সেই কমান্ড সিগন্যাল অনুসারে সার্ভো মোটরকে ঘোরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ জেনারেট করে থাকে এরপর সার্ভো মোটর, তার সাথে লাগানো বল স্ক্রুকে ঘুরিয়ে মেশিনের অ্যাক্সিসকে প্রয়োজনীয় অবস্থানে নিয়ে আসে বা মেশিনের স্পীন্ডলকে প্রয়োজনীয় rpm এ ঘুরিয়ে থাকে অর্থাৎ CNC মেশিনের অ্যাক্সিস, স্পীন্ডল ইত্যাদিকে CNC কন্ট্রোলার থেকে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট কমান্ড অনুসারে চালানোর জন্য সার্ভো মোটরগুলিকে প্রয়োজনীয় পাওয়ার সাপ্লাই করাই হল সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের মূল কাজ আমরা জানি মেটাল কাটিং মিলিং মেশিনে মেটালকে কাটা হয় ওয়ার্ক-পিসকে মুভমেন্ট করিয়ে এবং কাটিং টুলকে ঘুরিয়ে এবং এই কাজের জন্য মেশিনের স্পীন্ডলের কন্সট্যান্ট পাওয়ার এবং মেশিনের অ্যাক্সিসের কন্সট্যান্ট টর্কের প্রয়োজন হয় CNC মেশিনে মাইক্রোপ্রসেসর যুক্ত সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার ব্যাবহার করে স্পীন্ডলের এই কন্সট্যান্ট পাওয়ার এবং অ্যাক্সিসের কন্সট্যান্ট টর্ক পাওয়া যায় বর্তমানে প্রায় সমস্ত CNC মেশিন তৈরি হয় হাই কন্ট্রোল অ্যাকুইরেসি সহ, এবং সাথে সাথে মেশিনের অ্যাক্সিসের ও স্পীন্ডলের জন্য ভেরিয়েবল স্পীডের ব্যাবস্থা সহ

সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার প্রধানত দুই ধরনের হয়, অ্যাক্সিস বা ফীড সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার এবং স্পীন্ডল সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার ফীড সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার CNC মেশিনের অ্যাক্সিসের মুভমেন্টে সর্বদা কন্সট্যান্ট টর্ক (constant torque) পাওয়ার জন্য এবং স্পীন্ডল সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার স্পীন্ডলের মুভমেন্টে সবসময় কন্সট্যান্ট পাওয়ারের (constant power) জন্য ব্যাবহার করা হয়CNC মেশিনের আলাদা আলাদা অ্যাক্সিসের জন্য আলাদা ফীড অ্যামপ্লীফায়ার এবং স্পীন্ডলের জন্যও আলাদা সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার ব্যাবহার করা হয় এবং এই অ্যামপ্লীফায়ারগুলি সাধারনত খুবই এফিসিয়েন্ট, রিলায়েবল এবং সাইজেও ছোটো হয়বর্তমানে প্রায় সব ধরনের CNC মেশিনে AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারই ব্যাবহার করা হয়, কারন DC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের তুলনায় AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার ব্যাবহারের সুবিধা অনেক বেশি নিচে CNC মেশিনে ব্যাবহৃত কায়েকটি AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের ছবি দেওয়া হল



স্পীন্ডল সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার

CNC মেশিনে স্পীন্ডল সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার ব্যাবহার করা হয় বিশেষত হাই রোটেশনাল অ্যাকুইরেসি, Wide বা বিস্তৃত কন্সট্যান্ট পাওয়ার ব্যান্ড, স্মুদ রানিং , খুব দ্রুত ডাইনামিক রেস্পন্স এবং Large বা বিস্তৃত স্পীড রেঞ্জের জন্যCNC মেশিনে সাধারনত দুই ধরনের স্পীন্ডল সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার ব্যাবহার করা হয়, DC স্পীন্ডল অ্যামপ্লীফায়ার এবং AC স্পীন্ডল অ্যামপ্লীফায়ার আগেকার CNC মেশিনে DC স্পীন্ডল অ্যামপ্লীফায়ার ব্যাবহার করা হত মেশিনের স্পিন্ডলের কন্সট্যান্ট পাওয়ারের জন্যকিন্তু বর্তমানে মাইক্রোপ্রসেসার যুক্ত AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার প্রায় সব রকমের CNC মেশিনেই ব্যাবহার করা হয়, কারন DC স্পীন্ডল অ্যামপ্লীফায়ারের তুলনায় AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারে অনেক বেশী সুবিধা পাওয়া যায়, যেগুলির মধ্যে একটি মুখ্য সুবিধা হল AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার ব্যাবহার করলে CNC মেশিনের স্পীন্ডলকে “C-Axis” হিসাবেও ব্যাবহার করা যায়, কিন্তু DC স্পীন্ডল অ্যামপ্লীফায়ারের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। নিচে কয়েকটি স্পিন্ডল সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের ছবি দেওয়া হল।

ফীড সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার

ফীড সার্ভো অ্যামপ্লিফায়ার সাধারনত CNC মেশিনের অ্যাক্সিসগুলিকে চালনা করতে ব্যাবহার করা হয়একটি CNC মেশিনে যতগুলি অ্যাক্সিস থাকে, সাধারনত ততগুলিই ফীড সার্ভো অ্যামপ্লিফায়ার ব্যাবহার করা হয়CNC মেশিনে ব্যাবহৃত ফীড অ্যামপ্লীফায়ারেরও কিছু স্পেশাল characteristics রয়েছেযেমন ফীড অ্যামপ্লীফায়ার সবসময় কন্সট্যান্ট টর্কে (constant torque) কাজ করে এবং ফীড সার্ভো মোটরের পজিশানিং ও ফীডব্যাকও এই অ্যামপ্লীফায়ারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেএছাড়াও CNC মেশিনের কন্টিউরিং অপারেশান (contouring operation), যেখানে একটি নির্দিষ্ট বক্র (arc type) পাথে মেশিনের কাটিংএর জন্য মেশিনের দুটি অ্যাক্সিসের একসাথে মুভমেন্টের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে ফীড অ্যামপ্লীফায়ারগুলি নিজেদের মধ্যে সমন্নয় সাধন করে একসাথে কাজ করে থাকে। নিচে কয়েকটি ফীড সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের ছবি দেওয়া হল।

DC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার কিভাবে কাজ করে?

DC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার বা SCR-DC ড্রাইভে একটি সিলিকন কন্ট্রোল্ড রেক্টিফায়ার বা SCR ব্যাবহার করা হয় সিঙ্গল ফেজ AC বা থ্রি ফেজ AC মেইনস থেকে কন্ট্রোল্ড রেক্টিফিকেশানের এর দ্বারা DC মোটরকে চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ সাপ্লাই করার জন্য SCR বা থাইরিস্টর হল একটি সলিড স্টেট ডিভাইস যাতে তিনটি টার্মিনাল থাকে, এগুলি হল যথাক্রমে অ্যানোড, ক্যাথোড এবং গেটCNC কন্ট্রোলার থেকে রেফারেন্স ইনপুট যখন এই সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের কন্ট্রোল কার্ডে পাঠানো হয় তখন ঐ কন্ট্রোল কার্ড থেকে থাইরিস্টরের গেটকে ট্রিগার করার জন্য ক্যাথোডের তুলনায় পজিটিভ ফায়ারিং পালস পাঠানো হয়ফলে SCR বা থাইরিস্টরের ওয়ার্কিং প্রিন্সিপাল অনুযায়ী অ্যানোড এবং ক্যাথোডের মধ্যে কারেন্ট ফ্লো শুরু হয় এবং এটা ততক্ষণ চলতেই থাকে যতক্ষণ না SCR এর অ্যানোড ভোল্টেজ তুলে নেওয়া হচ্ছে বা ফায়ারিং পালসের পোলারিটি পরিবর্তন করা হচ্ছেথাইরিস্টরের গেটে পাঠানো ফায়ারিং পালসের অ্যাঙ্গেলের উপর নির্ভর করেই সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার থেকে সার্ভো মোটরে পাঠানো অ্যাভারেজ DC ভোল্টেজ কম বা বেশী হয়ে থাকেএই ড্রাইভের সাহায্যে থাইরিস্টরের খুব অল্প পরিমান গেট ভোল্টেজ কন্ট্রোল করেই অনেক বেশী পরিমান পাওয়ারকে কন্ট্রোল করা হয়ে থাকে। নিচে Dসার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের একটি ব্লক ডায়াগ্রাম দেখানো হল

AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ার কিভাবে কাজ করে?

যে কোন কনভেনশনাল AC মোটরের স্পীড সরাসরি নির্ভর করে AC মেইনসের ফ্রিকোয়েন্সি এবং মোটরের পোলের সংখ্যার ওপরঅর্থাৎ n = 20f/p যেখানে n = মোটরের স্পীড, f = সাপ্লাইয়ের ফ্রিকোয়েন্সি এবং p = মোটরের পোল সংখ্যা তাই কন্সট্যান্ট পোল সংখ্যা যুক্ত কোন মোটরের স্পীড নির্ভর করে থাকে শুধুমাত্র মোটরের সাপ্লাইয়ের ফ্রিকোয়েন্সির ওপরঅর্থাৎ কন্সট্যান্ট পোল বিশিষ্ট কোন মোটরের স্পীড সহজেই কম বা বেশী করা যায় শুধুমাত্র মোটরের ইনপুট সাপ্লাইয়ের ফ্রিকোয়েন্সি কম বা বেশী করেআবার যে কোন মোটরের V/F রেশিওকে (voltage to frequency) অবশ্যই কন্সট্যান্ট রাখতে হবে একটি নির্দিষ্ট স্পীড ব্যান্ডে ঐ মোটর থেকে কন্সট্যান্ট টর্ক পাওয়ার জন্যযেখানে V হল AC rms ভোল্টেজ এবং f হল ঐ AC ভোল্টেজের ফ্রিকোয়েন্সি তাই AC সার্ভো মোটরের একটি নির্দিষ্ট স্পীড ব্যান্ডে কন্সট্যান্ট টর্ক পাওয়ার জন্য সার্ভো ড্রাইভের আউটপুট ভোল্টেজের V/F রেশিওকে কন্সট্যান্ট রাখা হয়


আমারা জানি যে কোন AC মোটরের স্পীড কম বা বেশী করা যায় মোটরের সাপ্লাই ভোল্টেজের ফ্রীকোয়েন্সি পরিবর্তন করেAC সার্ভো ড্রাইভের সাহায্যেও AC সার্ভো মোটরের স্পীড কম বেশী করা হয় মোটরের সাপ্লাই ভোল্টেজের ফ্রীকোয়েন্সিকে পরিবর্তন করেএক্ষেত্রে প্রথমেই AC সার্ভো ড্রাইভের ইনপুট 3 phase, AC সাপ্লাইকে DC power এ কনভার্ট করা হয়এরপর ঐ DC power কে আবার সার্ভো ড্রাইভের মধ্যের বিভিন্ন সুইচিং মেকানিজমের সাহায্যে অ্যাডজাস্টেবল ফ্রীকোয়েন্সি 3 phase AC তে রূপান্তর করা হয় এবং সেই 3 phase AC ভোল্টেজ সার্ভো মোটরে পাঠানো হয়এই কারনে কেউ কেউ AC সার্ভো ড্রাইভকে ইনভার্টারও বলে থাকেনিচে AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারের একটি ব্লক ডায়াগ্রাম দেখানো হল

 


বেশিরভাগ AC সার্ভো অ্যামপ্লীফায়ারেই আউটপুট সাপ্লাইএর ফ্রীকোয়েন্সি পরিবর্তনের জন্য পালস উইদ মডুলেটেড কন্ট্রোল (pulse width modulated control) বা সংক্ষেপে PWM কন্ট্রোল সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়এই PWM কন্ট্রোল সিস্টেমের সার্ভো ড্রাইভে দুটি মুখ্য অংশ রয়েছে, প্রথমটি কনভার্টার এবং দ্বিতীয়টি ইনভার্টার সেকশননিচে প্রদত্ত ছবি থেকে বোঝা যায় সার্ভো ড্রাইভের কনভার্টার সেকশনের মুখ্য কাজই হল থ্রি ফেজ, AC লাইন ইনপুটকে রেক্টিফায়ারের সাহায্যে DC ভোল্টেজে পরিবর্তন করাকনভার্টার থেকে প্রাপ্ত DC ভোল্টেজকে এরপর ফিল্টারিং করা হয় যাতে কিনা একটি কন্সট্যান্ট এবং স্মুদ (constant and smoothed) DC ভোল্টেজ পাওয়া যায় এবং এই স্মুদ এবং কন্সট্যান্ট DC ভোল্টেজকে এরপর সরাসরি ড্রাইভের ইনভার্টার সেকশনে পাঠানো হয়

 
সার্ভো ড্রাইভের ইনভার্টার সেকশান AC আউটপুট ভোল্টেজ জেনারেট করে  সার্ভো মোটরে পাঠানোর জন্যড্রাইভের ইনভার্টার সেকশানের মধ্যে পজিটিভ ও নেগেটিভ সুইচিং এর ফলে গ্রুপ অফ ভোল্টেজ পালস (groups of voltage pulses) তৈরি হয় (পূর্বের ছবিতে দ্রষ্টব্য) PWM ড্রাইভের আউটপুট ভোল্টেজের ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল করা হয় আউটপুট ভোল্টেজের একটি হাফে পজিটিভ পালস এবং অপর হাফে নেগেটিভ পালস পাঠিয়েএবং আউটপুট ভোল্টেজের প্রতিটি হাফের পালসগুলির উইদ (widths) কম বা বেশি করে আউটপুট ভোল্টেজের ভ্যালু ঠিক করা হয়যেমন আউটপুট ভোল্টেজের ন্যারো ভোল্টেজ পালস (narrow voltage pulse) মানে লোয়ার ভোল্টেজ ভ্যালু এবং ওয়াইডার ভোল্টেজ পালস (wider voltage pulses) মানে হায়ার ভোল্টেজ ভ্যালুআউটপুট ভোল্টেজের পালসের এই কম বা বেশি করার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় পালস উইদ মডুলেটেড কন্ট্রোল বা সংক্ষেপে PWM control. আগের ছবিটিতে কেবলমাত্র ছটি পালস দেখানো হয়েছে ভোল্টেজের প্রতিটি হাফ সাইকেলেআউটপুট ভোল্টেজের একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির জন্য অপটিমাম নাম্বারের পালস এবং পালস উইদ তৈরি করা হয় যাতে কিনা ড্রাইভের আউটপুট ভোল্টেজ পিওর সাইন ওয়েভের খুব কাছাকাছি যায়


CNC মেশিনে যদি দুই, তিন বা তার বেশি সংখ্যক ড্রাইভ ব্যাবহার করা হয়, তবে আলাদা আলাদা পাওয়ার কনভার্টার ইউনিটের বদলে কখনও কখনও একটিই মাত্র পাওয়ার কনভার্টার ইউনিট ব্যাবহার করা হয় এবং সেক্ষেত্রে ঐ পাওয়ার কনভার্টারের আউটপূট ভোল্টেজ একটি DC Bus এ ফেলা হয় এবং সমস্ত ড্রাইভের ইনভার্টার সেকশন ঐ DC Bus থেকে প্রয়োজনীয় DC ভোল্টেজ ইনপুট হিসাবে নিয়ে থাকেনিচের ছবিতে একটিই পাওয়ার কনভার্টারের সাথে কিভাবে তিনটি সার্ভো ড্রাইভের সংযোগ থাকে তা দেখানো হল

সার্ভো ড্রাইভের ব্রেকিং ব্যাবস্থা কি?

CNC মেশিনে ব্যাবহৃত সার্ভো মোটরগুলিতে ব্রেকিং একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সকল সার্ভো ড্রাইভেই ব্রেকিং সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়সার্ভো মোটর দ্বারা চালিত মেশিনের অ্যাক্সিস বা স্পীন্ডল চলতে চলতে সর্বদা তাদের ঠিক ঠিক কমান্ড পজিশানে অথবা পাওয়ার ফেলিওর বা ইমারজেন্সি অবস্থার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে থামাতে হয়নতুবা মেশিনের অ্যাক্সিস বা স্পীন্ডলের সবসময়েই overshoot হবার সম্ভাবনা থেকে যায় সার্ভো ড্রাইভে ব্রেকিং ব্যাবস্থা সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকেপ্রথমটি ডাইনামিক ব্রেকিং (Dynamic Breaking) এবং অপরটি রিজেনারেটিভ ব্রেকিং (Regenerative Breaking)

ডাইনামিক ব্রেকিং (Dynamic Breaking) - এই ধরেনের ব্রেকিং ব্যাবস্থায় যখন মোটরের ব্রেকিং এর প্রয়োজন হয় তখন মোটরের আর্মেচারের প্রান্তগুলিকে কন্টাক্টরের সাহায্যে একটি ডাইনামিক ব্রেকিং রেজিষ্টরের (Dynamic Breaking Resistor or DBR) সাথে সংযোগ করা হয় এর ফলে মোটরের মধ্যে সঞ্চিত কাইনেটিক এনার্জি (kinetic energy) ঐ ডাইনামিক ব্রেকিং রেজিষ্টরের মধ্যে হিট এর ফর্মে পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং এই সময় মোটরের মধ্যে একটি রিভার্স টর্ক জেনারেট হয় যা কিনা মোটরেটিকে খুব দ্রুত থামতে সাহায্য করেএই ধরনের ব্রেকিং ব্যাবস্থা CNC মেশিনের পাওয়ার ফেইলিওর এবং ইমারজেন্সি অবস্থার ক্ষেত্রে খুবই ফলদায়ক হয়

রিজেনারেটিভ ব্রেকিং (Regenerative Breaking) - এই ব্যাবস্থায় মোটরের ব্রেকিং এর জন্য সার্ভো ড্রাইভের মধ্যেই পাওয়ার সেকশনের ফায়ারিং পালসের সিকোয়েন্স খুব অল্প সময়ের জন্য পাল্টে (change the sequence of firing pulses) দেওয়া হয় এবং এর ফলে ড্রাইভ থেকে মোটরে পাঠানো পাওয়ারের ফেজ সিকোয়েন্সও পাল্টিয়ে যায়, ফলে মোটরের মধ্যেই অল্প সময়ের জন্য একটি রিভার্স মুভমেন্ট কাজ করে এবং মোটরটিকে দ্রুত থামতে সাহায্য করেমোটরে পাঠানো সাপ্লাইয়ের এইরকম হঠাৎ পরিবর্তনের ফলে যাতে মোটরের কোন ক্ষতি না হয় তার জন্য সার্ভো ড্রাইভের মধ্যেই একটি র‍্যাম্প নেটওয়ার্ক (ramp network) ব্যাবহার করা হয়ে থাকেতবে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং শুধুমাত্র সম্পুর্ণরুপে কন্ট্রোলড সার্ভো ড্রাইভের ক্ষেত্রেই করা সম্ভব

 


সার্ভো সিস্টেম কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে?

পূর্বের ছবি অনুযায়ী AC সার্ভো মোটর কে চালানোর জন্য CNC কন্ট্রোলার থেকে একটি রেফারেন্স ইনপুট সার্ভো অ্যামপ্লিফায়ারে পাঠানো হয় যার উপর নির্ভর করে মোটরের স্পীড কম বা বেশী হয়ে থাকেএবং সার্ভো অ্যামপ্লিফায়ার ঐ রেফারেন্স ইনপুট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্পীড পাওয়ার জন্য সার্ভো মোটরে প্রয়োজনীয় ভোল্টেজ পাঠিয়ে থাকেসার্ভো অ্যামপ্লিফায়ার থেকে প্রাপ্ত এই ভোল্টেজকে PWM voltage বা Pulse Width Modulated Voltage বলা হয়সার্ভো অ্যামপ্লিফায়ার থেকে প্রাপ্ত এই PWM ভোল্টেজের অ্যামপ্লিচিউড এবং ফ্রিকোয়েন্সি দুইই পরিবর্তন করা হয়ে থাকে

সার্ভো মোটরের রোটর বা শ্যাফটের সাথে একটি এনকোডার বা রিজলভার ফীডব্যাক ডিভাইস হিসাবে লাগানো থাকেএই ফীডব্যাক ডিভাইসটি মোটরের মেকানিক্যাল মোশানকে ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যালে রুপান্তর করে আগের ছবি অনুযায়ী এই ইলেক্ট্রিক্যাল সিগন্যাল সার্ভো অ্যামপ্লিফায়ারে অবস্থিত এরর ডিটেক্টরে (error detector) ফীডব্যাক হিসাবে পাঠানো হয়এরপর এরর ডিটেক্টর এনকোডার বা রিজলভার থেকে প্রাপ্ত ফীডব্যাক এবং রেফারেন্স ইনপুটের মধ্যে কম্পেয়ার (compare) করে এবং এই কম্পেয়ারের ফলে যদি কোনো ভুল বা এরর (error) উৎপন্ন হয় তবে এরর ডিটেক্টর তৎক্ষণাৎ সেটি সরাসরি অ্যামপ্লিফায়ারে পাঠিয়ে দেয় এবং অ্যামপ্লিফায়ার সার্ভো মোটরকে ঘোরানোর জন্য প্রয়োজনীয় ভোল্টেজের পরিবর্তন করেবেশীরভাগ সার্ভো সিস্টেমেই ভেলোসিটি এবং পজিশান দুটোই মনিটরিং করা হয়অর্থাৎ সেক্ষেত্রে ভেলোসিটি এবং পজিশান দুটো ক্ষেত্রেই দুটি আলাদা এরর ডিটেক্টর কাজ করেসুতরাং এটি একটি ক্লোজড লুপ সিস্টেমে কাজ করে, এবং এই সম্পুর্ণ ব্যাবস্থাটিকেই সার্ভো সিস্টেম বলা হয়নিচে CNC  মেশিনের কন্ট্রোলার এবং সার্ভো অ্যামপ্লিফায়ার ও মোটরের সংযোগ ব্যাবস্থা দেখানো হল।  


Popular Posts